আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২২/১২/২০২৪ ১১:২৯এ এম
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘গড়িমসি’: আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে অনীহা, শুমারির সঠিকতা নিয়ে শঙ্কা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বর্তমানে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ পরিচালনা করছে। প্রতি ১০ বছরে একবার পরিচালিত এই শুমারি দেশের অর্থনৈতিক চিত্র এবং জনগণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের জন্য অনন্য। তবে এবার আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য সংগ্রহে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিবিএস। বিশেষ করে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য দিতে গড়িমসি করায় শুমারির সঠিকতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
তথ্য দিতে ভয়: শুমারির কার্যক্রমে বড় চ্যালেঞ্জ
তথ্য সংগ্রহকারীদের অভিযোগ, মাঠপর্যায়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণ আয়ের সঠিক হিসাব দিতে ভয় পাচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান একাধিকবার যোগাযোগ করলেও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রদান করছেন না। এমনকি গার্মেন্টসসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
আশুলিয়ার সুপারভাইজার আমিরুল ইসলাম বলেন,
“লোকেরা ভয়ে সঠিক হিসাব দিতে চাচ্ছে না। তারা ভাবছে এসব তথ্যের ভিত্তিতে তাদের কর আরোপ করা হবে। তবে বোঝানোর পর কিছুটা সহযোগিতা মিলছে।”
চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চেষ্টা
অর্থনৈতিক শুমারির উপপ্রকল্প পরিচালক মিজানুর ইসলাম জানিয়েছেন, মাঠপর্যায়ের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহকারীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন,
“আয়-ব্যয়ের তথ্য না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সঠিক তথ্য তুলে আনতে।”
এদিকে প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আখতার জানান, ইতোমধ্যে শুমারির ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তিনি আরও বলেন,
“শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার বলছি, আপনাদের তথ্য সম্পূর্ণ গোপন থাকবে। কোনো তৃতীয় পক্ষ, যেমন ব্যাংক বা এনবিআর, এসব তথ্য ব্যবহার করতে পারবে না।”
শুমারির গুরুত্ব: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তি
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন,
“এই শুমারির মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা গেলে সরকারের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা সফল হবে। অন্যথায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
এবারের শুমারিতে প্রথমবারের মতো ট্যাবলেটের মাধ্যমে ক্যাপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১ কোটি ২২ লাখ ইউনিট চিহ্নিত করা হয়েছে।
তথ্য লুকানোর প্রবণতা: সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় প্রভাব
গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় বারবার তথ্য চেয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারীদের। অনেকে কিছু তথ্য দিলেও আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে চাচ্ছেন না। তবে তথ্য লুকানোর এই প্রবণতা শুধু শুমারির সঠিকতাকেই নয়, বরং সরকারের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সারসংক্ষেপ
দেশের ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। এবার শুমারিতে শুধু স্থানীয় নয়, বিদেশি কর্মীদের তথ্যও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। নারী-পুরুষ কর্মীর সংখ্যা, তাদের পেশা, এবং অন্যান্য বিবরণ তুলে আনা হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র নির্ধারণে সহায়ক হবে।
শুমারির সাফল্য নির্ভর করছে সহযোগিতার ওপর
বিবিএসের কর্মকর্তারা মনে করছেন, শুমারির সাফল্যের জন্য প্রয়োজন জনগণ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য না পেলে শুমারির মূল লক্ষ্য অপূর্ণ থেকে যাবে। সঠিক তথ্যই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি।
---দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরতে এই শুমারিতে আপনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।