বিচার বিভাগের বিতর্কিত অধ্যায়: সাবেক দুই প্রধান বিচারপতিকে দায়ী করলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও বিচারিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য ঘিরে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এবং সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দায়ী করে তিনি বিচার বিভাগের ধ্বংসের কথা বলেছেন। তার এই মন্তব্য যে নতুন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই ঘটনায় মূলত তিনটি পক্ষ উঠে এসেছে:
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান: তিনি সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন বিচার বিভাগের ধ্বংসের জন্য। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক: পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন: বিচার বিভাগের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও সংবিধান সংশোধনীতে জড়িত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেছেন:
সাবেক দুই প্রধান বিচারপতির ভূমিকার কারণে বিচার বিভাগ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এর ফলে জুলাই আন্দোলনে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে আবারও বৈধতা দিয়েছে। এদিকে, হাইকোর্টের রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রশ্নটি আবারও নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এই আলোচনার সূত্রপাত হয়:
১৭ ডিসেম্বর: অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের কাছে এই বক্তব্য দেন। হাইকোর্টের রায় একই দিনে ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের পরই বিচার বিভাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিতর্কের মূল কারণগুলো হলো:
পঞ্চদশ সংশোধনী: তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জুলাই আন্দোলন: বিচার বিভাগে আস্থার অভাবে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা আন্দোলনের রূপ নেয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, সাবেক দুই প্রধান বিচারপতি বিচারিক কাঠামোকে দুর্বল করেছেন। এছাড়া, রাজনৈতিক মহলে এই রায় নতুন করে ক্ষমতার ভারসাম্য ও গণতান্ত্রিক ধারার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে।
রায়ের প্রভাব: কী হবে ভবিষ্যতে?
এই রায়ের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য প্রভাব দেখা দিতে পারে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনরুত্থান: নির্বাচনের সময়কালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে চাপ বাড়বে। রাজনৈতিক উত্তেজনা: ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে নতুন বিতর্ক তৈরি হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: আদালতের রায় ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর জনমনে আস্থার সংকট আরও গভীর হতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের মন্তব্য এবং হাইকোর্টের রায় দেশের বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এবং গণতান্ত্রিক শাসন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে বিচার বিভাগ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করেছে, সংকট যতই গভীর হোক না কেন, গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে সমাধান সম্ভব। এই রায় ও মন্তব্য সেই সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক: আব্দুল আল মামুন
পেশা: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট