আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২০/০১/২০২৫ ০১:৩৭পি এম
বুড়িচংয়ে ২০৩টি খাল হারিয়ে যাচ্ছে দখলদারদের হাতে, কৃষি বিপর্যয়ের আশঙ্কা
পরিপূর্ণ খাল পুনঃখনন না হলে বুড়িচংয়ের কৃষি জমি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা
কুমিল্লা শহরের উত্তরে অবস্থিত বুড়িচং উপজেলা, যা ১৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ৯টি ইউনিয়ন, ১৭২টি গ্রাম ও ১৫২টি মৌজা নিয়ে গঠিত, আজ বিপদ সংকেতের মুখে। এই উপজেলায় প্রায় ২ লাখ ৯৯ হাজার মানুষ বসবাস করছে এবং এখানকার কৃষকরা ধান চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে, বুড়িচংয়ের প্রভাবশালীরা যে ২০৩টি খাল দখল করে ফেলেছে, তা উপজেলাটির কৃষির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
খাল দখল ও ভরাটের ফলে জলাবদ্ধতা এবং কৃষকের ক্ষতি
বুড়িচংয়ের খালগুলো প্রধানত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ভূমিকা পালন করত, কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে বা ভরাট হয়ে গেছে। খালগুলোর ভরাট হওয়ার কারণে প্রতিবার বৃষ্টির পর কৃষকরা যে জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হন, তা তাদের আবাদি ফসলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বুড়িচংয়ের পয়াতের জলা নামক এলাকায় এ সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। এখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে যায় এবং ধানের ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কৃষকদের দাবি, খালগুলো পুনঃখনন করা না হলে তাদের জীবন ও জীবিকা সংকটে পড়ে যাবে। ব্যবসায়ী এবং কৃষকরা সবার সাথে একমত, খালগুলো পুনঃখনন করতে না পারলে কৃষির ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে।
প্রভাবশালীদের দখলদারির ফলে খালের অস্তিত্ব বিলীন
স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ২০৩টি খালের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ খালের অস্তিত্ব আর নেই। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে খালগুলো দখল করে নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দপ্তরের সঠিক তদারকির অভাবে এসব খাল ভরাট হয়ে গেছে এবং কোথাও কোথাও খালের চিহ্নও মুছে গেছে।
সরকারি উদ্যোগ এবং স্থানীয় প্রতিকার প্রক্রিয়া
বুড়িচংয়ের কৃষকরা খালগুলোর পুনঃখননের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন, তবে কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। কয়েক মাস আগে, বুড়িচং বাজারের পশ্চিম পাশের তিথী খালটি পুনঃখনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে এটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। খনন কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা অজুহাত দেওয়া হয়েছে, যার ফলে খালের জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ সুজন বলেন, “পয়াতের জলা থেকে হরিপুর-জরুইন পর্যন্ত যে খালটি ছিল, তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এতে আমাদের আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।”
একইভাবে, বুড়িচং মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. কবির হোসেন বলেছেন, “খালগুলো খনন না করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর। দ্রুত খালগুলো খননের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবাদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন খাল পুনঃখননের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “আমরা বহুবার সরকারি দপ্তরে আবেদন করেছি। যদি দ্রুত খালগুলো পুনঃখনন না করা হয়, তবে আমরা আরও বড় আন্দোলন করব।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আশ্বাস
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার জানিয়েছেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে খাল পুনঃখননের জন্য একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী খনন কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিপদ ও আশার আলো
বর্তমানে, বুড়িচং উপজেলার কৃষির জন্য খাল পুনঃখনন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালগুলোর অস্তিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে এবং কৃষকরা তাদের ফসলের সঠিক পরিচর্যা করতে পারবেন। তবে, এর জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা এবং স্থানীয় জনসমর্থনও অপরিহার্য।
বুড়িচংয়ের খাল পুনঃখননের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে কৃষকরা তাদের উন্নত ফসলের সুযোগ পায় এবং এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হয়। অন্যথায়, কৃষকদের জীবন-জীবিকা ও এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।