দুদকের অনুসন্ধান: শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অভিযোগে নাম রয়েছে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের।
দুদক জানিয়েছে, মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে অন্যতম হল:
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত।
আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেজা ও বেপজা সংক্রান্ত ৮টি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত।
এইসব অভিযোগে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, এবং আর্থিক অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে।
এই দুর্নীতির ঘটনাগুলি বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে ঘটেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত। এছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) ও বেপজা (বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ) সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে।
দুদকের মতে, এসব প্রকল্পের আর্থিক অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতার অভিযোগের কারণে তদন্ত শুরু হয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সূত্র থেকে এ ধরনের বিশাল অঙ্কের দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়। দেশের জনগণের করের টাকায় পরিচালিত এসব প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা হবে ইতিহাসের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নিয়ে আগে থেকেই সমালোচনা ছিল। আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো অস্বাভাবিক ব্যয়ের হিসাব ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামগুলোর অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয়ের অভিযোগ। এর সঙ্গে নতুন করে শেখ পরিবারের নাম জড়ানো বিষয়টিকে অনেকেই রাজনৈতিক বিতর্কের ইন্ধন হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল দেশের গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এই মহৎ প্রকল্পের অর্থ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
দুদকের মহাপরিচালক আকতার হোসেন বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা হবে। তবে এই তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এত বড় পরিসরের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা দুদকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অভিযোগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ এটিকে সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়াস মনে করছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি দুর্নীতির অন্যতম আলোচিত একটি ঘটনা হতে পারে। শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সুষ্ঠু তদন্ত এবং স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশবাসী এখন দুদকের কার্যক্রমের দিকে তাকিয়ে রয়েছে—তারা কি সত্যিই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে?
লেখক: আব্দুল আল মামুন
পেশা: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট