আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ৩০/১২/২০২৪ ১০:০৫এ এম
আওয়ামী আমলে বই উৎসবের আড়ালে ৭৩ লাখ টাকার লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য!
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বই উৎসবের নামে লুটপাটের একটি বিস্তৃত চিত্র উঠে এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন দফতর ও শিক্ষা বোর্ডের তহবিল ব্যবহার করে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পরিচালিত একটি তদন্তে এই তথ্য প্রকাশ পায়।
হল ভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি
২০২১ সালের বই উৎসব আয়োজনের জন্য ঢাকার একটি হল ভাড়ায় ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। অথচ পরের বছর, ২০২২ সালে, একই হলের ভাড়া দেখানো হয় ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬২ টাকা—যা অবিশ্বাস্য এবং অযৌক্তিক। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই খাতেই এনসিটিবি ১৫টি বিলের মাধ্যমে প্রায় ৭৩ লাখ ২১ হাজার ৩ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে।
উৎসবের নামে খরচের খাত
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বই উৎসবের আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ১৩ লাখ ৯ হাজার ১৯ টাকা। ২০২২ সালে ইন্টারনেট সংযোগ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, যা কাজলা টেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বরাবর পরিশোধ করা হয়। একই বছর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬২ টাকা নগদ দেওয়া হয়। এমনকি ২০২৩ সালে ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।
বিল ভাউচারের অনিয়ম
তদন্তে উঠে আসে, অনেক বিল-ভাউচারে খরচের খাত স্পষ্ট উল্লেখ নেই। উদাহরণস্বরূপ, ভাউচার নং ১০৪৫-এ ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হলেও এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। একইভাবে ২০৬৫ নং ভাউচারে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং লিমিটেডের নামে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯৪ টাকা খরচ দেখানো হয়। এছাড়াও ২০২৩ সালের বই উৎসবে আপ্যায়ন, দাওয়াত কার্ড, গাড়ি ভাড়া এবং পাটের ব্যাগ কেনাসহ বিভিন্ন খাতেও ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে।
সংশ্লিষ্টদের মতামত
এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, অতীতে উৎসব আয়োজনের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হলেও বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এই বছর বইয়ের মান এবং সময়মতো সরবরাহের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। তিনি আশ্বাস দেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধান বইগুলো জানুয়ারির শুরুতেই সরবরাহ করা হবে।
উদ্বেগ ও পদক্ষেপ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, ডিপিইসহ বিভিন্ন শিক্ষা দফতরের বরাদ্দ থেকে এই অর্থ লুটপাটের ঘটনা এখন তদন্তের আওতায় এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা প্রয়োজন।
এই ধরণের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাগুলো শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতিই নয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটি দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি।