আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ৩০/১২/২০২৪ ১০:০৩এ এম
নবীজির চিঠির অবমাননা: ইতিহাসে পারস্য সম্রাটের চরম পরিণতি
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কার মাটিতে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন পারস্য সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর অন্যতম সুপার পাওয়ার। পারস্যের লোকজন জরথুস্ট্র ধর্মের অনুসারী ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, জরথুস্ট্র একসময় নবী ছিলেন এবং তার ওপর প্রেরিত আসমানি গ্রন্থের নাম ছিল জেন্দাবেস্তা। যদিও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা একত্ববাদের শিক্ষা ভুলে গিয়ে অগ্নি উপাসনায় মগ্ন হয়ে পড়ে।
রাসুল (সা.)-এর সমসাময়িক পারস্য সম্রাট ছিলেন কিসরা পারভেজ, যিনি ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও অহংকারী। তার দরবারে হাজির হন নবীজির প্রেরিত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে হুজায়ফা (রা.), হাতে নবীজির একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি। চিঠির ভাষা ছিল—
"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। শান্তি বর্ষিত হোক তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসারী। আমি আল্লাহর নির্দেশে আপনাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করলে শান্তি ও সম্মান আপনার হবে। আর অস্বীকার করলে আপনার প্রজাদের গোনাহ আপনার ওপর বর্তাবে।"
চিঠিটি পড়ে রাগে ফেটে পড়েন কিসরা। তিনি চিঠিকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে ঘোষণা দেন, “আমি পারস্যের সম্রাট, আর মুহাম্মদ (সা.) আমার গোলাম! সে আমাকে ঈমান আনার দাওয়াত দেয়?”
নবীজির কাছে পুরো ঘটনা জানান আবদুল্লাহ (রা.)। নবীজি কষ্ট পেয়ে বলেন, “আমার চিঠির মতো তার সাম্রাজ্যও টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।” এটি ছিল নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী।
পরবর্তীতে কিসরা পারভেজ সিরিয়ার প্রশাসক বাজানকে নির্দেশ দেন রাসুলকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার। বাজান নবীজির কাছে দু’জন দূত পাঠান। তারা নবীজিকে জানায়, “আপনাকে সম্রাটের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।” নবীজি তাদের শান্তভাবে বিশ্রাম নিতে বলেন এবং পরদিন সকালে জানান, “গত রাতে সম্রাট কিসরার ছেলে শেরওয়াইহি তাকে হত্যা করে রাজত্ব দখল করেছে। তোমরা বাজানকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানাও।”
পরবর্তীতে জানা যায়, সত্যিই সম্রাট কিসরা তার ছেলের হাতে সেদিন খুন হন। ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, সম্রাটের মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছিল, ঠিক যেমনটি তিনি নবীজির চিঠির সঙ্গে করেছিলেন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, আল্লাহর নবীর সঙ্গে বেয়াদবি কখনোই ক্ষমার যোগ্য নয়। ইতিহাস বারবার এই সত্যের সাক্ষী। (সূত্র: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, শাওয়াহেদুন নবুওয়াত)