আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২০/০১/২০২৫ ০১:৩৯পি এম
দিনাজপুরে টিউলিপের চাষে নতুন সম্ভাবনার উন্মোচন, ফুলের রাজ্যে এলো ভিন্ন সৌন্দর্য
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় এবার শীতপ্রধান দেশগুলোর বিখ্যাত ফুল, টিউলিপের সফল চাষ শুরু হয়েছে। এই নতুন উদ্যোগ শুধু দিনাজপুরের ফুল চাষিদের জন্য নয়, গোটা ফুল শিল্পের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষত, আগত বসন্ত উৎসব, ভাষা দিবস, ও ভালোবাসা দিবসে টিউলিপের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টিউলিপ চাষের শুরু
টিউলিপের চাষ শুরু হয় বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর আটগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাছিনুর রহমান চৌধুরীর উদ্যোগে। তার দুটি শতক জমিতে প্রাথমিকভাবে চারা রোপণ করা হয় এবং এর মধ্যে কিছু হলুদ রঙের টিউলিপ ইতোমধ্যে ফুটে উঠেছে। প্রথমবারের মতো এই ফুল দেখা যাচ্ছে দিনাজপুরে, যা স্থানীয়দের মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে। টিউলিপের বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছে, তবে বাগানটি নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে এবং লোকজনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
কৃষকদের জন্য নতুন দিগন্ত
হাছিনুর রহমান চৌধুরী জানান, তার ভাতিজা তাসিকুল আলম তপু পঞ্চগড়ে টিউলিপ চাষ দেখে তাকে উৎসাহিত করে। এর ফলে তিনি ৫০০টি চারা ক্রয় করেন এবং পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। ইউটিউবের মাধ্যমে তিনি টিউলিপ চাষের প্রক্রিয়া শিখেছেন। তার বাগানে প্রায় ১৩ দিনের মধ্যে টিউলিপের ফুল ফুটেছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তিনি দক্ষতার সাথে টিউলিপ চাষ করছেন এবং ভবিষ্যতে আরো জমিতে এই ফুলের চাষ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।
ফুলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা
দিনাজপুরের ফুলের বাজারে গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস এবং রজনীগন্ধার মতো ফুল ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হলেও টিউলিপের নতুনত্ব ও সৌন্দর্য ফুলপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দেশের বাইরে থেকে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, যা দিনাজপুরের ফুল চাষিদের জন্য নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করেছে। একদিকে যেখানে অন্যান্য ফুলের চাষের জন্য জমির পরিমাণ সীমিত, সেখানে টিউলিপ চাষের জন্য নতুন ধরনের পরিবেশ ও পরিচর্যা প্রয়োজন।
কৃষি বিভাগের সহযোগিতা
বোচাগঞ্জ উপজেলার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এ চাষ প্রকল্পে সহযোগিতা দিচ্ছেন এবং প্রশংসা করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নয়ন কুমার সাহা জানান, তারা টিউলিপের চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও তদারকি করবেন এবং ভবিষ্যতে এই চাষের পরিসর বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিবেন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
হাছিনুর রহমান চৌধুরী বলেন, তার প্রাথমিক লক্ষ্য টিউলিপের চাষে সফলতা অর্জন করে পরবর্তীতে ৪ একর জমিতে টিউলিপ চাষ সম্প্রসারণ করা। এদিকে, ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসব ও ভাষা দিবসের মতো অনুষ্ঠানে এই টিউলিপ বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তিনি আশা করছেন, তার বাগানের টিউলিপ ফুলের বিক্রি দেশের ভেতর এবং বাইরের বাজারে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পাবে।
সংক্ষেপে
টিউলিপের চাষ দিনাজপুরে ফুল চাষের অর্থনীতি এবং কৃষি খাতে এক নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের ফুল চাষিরা এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন, আর দিনাজপুরের কৃষকরা এই চাষের মাধ্যমে ফুল চাষের নতুন দিগন্তে পা রাখছে। এতে শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে।