আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২২/১২/২০২৪ ১১:০৬এ এম
গ্যাস উত্তোলনে বিপ্লবের পথে সরকার: একনেকে উঠছে তিন যুগান্তকারী প্রকল্প
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদার প্রেক্ষাপটে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে।
গ্যাস চাহিদা ও ঘাটতি: সংকট থেকে সমাধানের পথে
দেশে গ্যাসের চাহিদা ছয় বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, তবে উৎপাদন সেই তুলনায় বেড়েনি। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা এবং শিল্পখাতে গ্যাসের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এর ফলে সরকার ব্যয়বহুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এ পর্যন্ত ৫৭.৮২ মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে খরচ হয়েছে ১.৬৪ লাখ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যয়বহুল আমদানির পরিবর্তে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ করলে আমদানিনির্ভরতা দ্রুত কমানো সম্ভব।
একনেকে তিন প্রকল্পের প্রস্তাবনা
১. ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র প্রকল্প:
ব্যয়: ২৩৮ কোটি টাকা।
কাজ: ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন।
বাস্তবায়ন: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।
মেয়াদ: ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর।
রশিদপুর-১১ নম্বর কূপ খনন প্রকল্প:
ব্যয়: ২৭১.৮৭ কোটি টাকা।
বাস্তবায়ন: সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।
মেয়াদ: ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
টু-ডি সিসমিক সার্ভে ওভার এক্সপ্লোরেশন ব্লক ৭ এবং ৯ প্রকল্প:
ব্যয়: ৩০০.৩৯ কোটি টাকা।
কাজ: চারটি বিভাগের ১৭টি জেলার ৭৮টি উপজেলায় সিসমিক জরিপ।
মেয়াদ: ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্য
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫টি কূপ খনন করে প্রতিদিন ১৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত ৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫টি কূপ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরীর মতে, এলএনজির উপর নির্ভরতা দেশকে বড় অর্থনৈতিক চাপের মুখে ফেলেছে। সরকারের উচিত স্থানীয় গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ বাড়ানো।
এছাড়া ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইএফএ) জানিয়েছে, শিল্প কারখানাগুলোতে দক্ষ জেনারেটর ব্যবহার করলে বছরে ৪৬ কোটি ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
শেষ কথা
সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় নয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। যদি এসব প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে এলএনজির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে এবং দেশের নিজস্ব গ্যাস সম্পদ ব্যবহারে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটবে।
হেডলাইন:
“গ্যাস উত্তোলনে নতুন বিপ্লব: আমদানিনির্ভরতা কমাতে একনেকে উঠছে তিন যুগান্তকারী প্রকল্প”