আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২২/১২/২০২৪ ১১:০৩এ এম
ভয়ঙ্কর অপরাধ জোন: ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের রাজত্ব
রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকাগুলো এখন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে। চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন, হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের মতো ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির মাঝেও এ অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড থামছে না।
সন্ত্রাসী দৌরাত্ম্যের ভয়াবহ উদাহরণ
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজ রাজধানীর আজিমপুর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনের ওপর সন্ত্রাসীদের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরে। ভিডিওতে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা তাকে চাপাতি দেখিয়ে জবাই করার হুমকি দিচ্ছে। ভিডিওতে অস্ত্রধারীদের দাবি ছিল, এলাকার ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
ভিডিওতে আমিনের সঙ্গে থাকা কথোপকথনে সন্ত্রাসীদের হুমকি ও তাদের দাপট স্পষ্ট। এ ঘটনার জন্য জামিনপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও তার বাহিনীর ক্যাডারদের দায়ী করা হয়েছে।
ইমন বাহিনীর দাপট
ইমন বাহিনী ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, হাজারীবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, চাঁদাবাজি ও অপহরণ অন্যতম।
১ ডিসেম্বর সুলতানগঞ্জের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তাদের গোপন বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ক্যাডাররা মোটরসাইকেলে অস্ত্রের মহড়া দেয়। পরদিন হাজারীবাগ থেকে তিন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
পিচ্চি হেলালের পুনরুত্থান
পিচ্চি হেলাল, মোহাম্মদপুর অঞ্চলের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার পুরনো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে মরিয়া। জেল থেকে বেরিয়ে রায়েরবাজার, শ্যামলী, লালমাটিয়া, কৃষি মার্কেটসহ একাধিক এলাকায় তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পিচ্চি হেলালের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
সন্ত্রাসীদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে ধানমন্ডির একটি ইনস্যুরেন্স কার্যালয়ে হামলা ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চিত করে যুবদলের কয়েকজন নেতার সংশ্লিষ্টতা।
পুলিশের প্রতিশ্রুতি ও বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মো. তালেবুর রহমান বলেছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর থেকে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক মনে করেন, সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সাধারণ মানুষের আতঙ্ক ও করণীয়
সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপে আতঙ্কিত। বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সমন্বিতভাবে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
শেষ কথা
ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসীদের এ ধরনের দাপট শুধু আইনশৃঙ্খলার অবনতিরই নয়, বরং একটি সমাজে নৈতিক অধঃপতনেরও ইঙ্গিত দেয়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।