রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২১/১২/২০২৪ ০৭:৪১পি এম

একাত্তরের সমাধান ছাড়া সম্পর্ক নয়: কায়রো বৈঠকে বাংলাদেশের কড়া বার্তা

একাত্তরের সমাধান ছাড়া সম্পর্ক নয়: কায়রো বৈঠকে বাংলাদেশের কড়া বার্তা
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

"অমীমাংসিত বিষয় মিটিয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গড়ে তুলুন"

প্রফেসর ইউনূস দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “ইস্যুগুলো বারবার সামনে আসছে। আসুন, এগুলো সমাধান করে এগিয়ে যাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটাই হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ।”

তবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কথা উল্লেখ করে দাবি করেন, এই চুক্তির মাধ্যমেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে, যদি অন্য কোনো অমীমাংসিত ইস্যু থেকে থাকে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি প্রস্তুত বলে জানান।

"সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা"

বৈঠকে দুই নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে একমত হন। একইসঙ্গে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা এবং চিনি শিল্পের মতো ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, “সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে সংস্কার বাস্তবায়ন এবং ২০২৬ সালের আগে সাধারণ নির্বাচন। আমি এই বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে একটি কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছি।”

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাই।”

"সার্ক পুনরুজ্জীবন: প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু"

প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল। তিনি বলেন, “আমি সার্ক ধারণার বড় ভক্ত। এমনকি যদি একটি শীর্ষ সম্মেলন শুধুমাত্র ফটো সেশনের জন্য হয়, তবুও এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে।”

শেহবাজ শরীফ সার্ক পুনরুজ্জীবনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশকে এ বিষয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

"ডেঙ্গু মোকাবিলায় সহযোগিতার প্রস্তাব"

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালিত চিনিকলগুলোর উন্নয়নে কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দেন। ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতিতে শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, “পঞ্জাবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের অভিজ্ঞতা বিশ্বমানের বলে স্বীকৃত। আমরা সেই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠাতে পারি।”

"ভবিষ্যৎ সফরের প্রতিশ্রুতি"

বৈঠকের শেষ পর্যায়ে শেহবাজ শরীফ প্রফেসর ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়, যা তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন।

"সম্পর্কের অগ্রগতি নাকি একাত্তরের হিসাব চুকানোর অপেক্ষা?"
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এই বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিলেও একাত্তরের অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান ছাড়া সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ