শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
Verified আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১১/০৯/২০২৪ ১২:৩৮পি এম

ডিএনসিসিতে মেয়র আতিকের পারিবারিক সিন্ডিকেট

ডিএনসিসিতে মেয়র আতিকের পারিবারিক সিন্ডিকেট
শেখ হাসিনার পতনের পর একে একে বেরিয়ে আসছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য। ভাতিজা-ভাগিনাসহ আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে ডিএনসিসিতে পরিবারিক একটি সিন্ডিকেট করেছিলেন তিনি।

ডিএনসিসির ছোট-বড় সব খাত থেকে অর্থ লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। লুটপাট থেকে বাদ যায়নি বস্তি উন্নয়নের টাকাও। এছাড়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন, নিয়োগ, বদলি ও ময়লা বাণিজ্যসহ ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন রাজধানীর সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে খরচ করেছেন জনগণের করের টাকা। বাড়তি বিল ভাউচারে আপত্তি তোলায় কর্মকর্তাকে বদলি করার মতো নজিরও স্থাপন করেছেন সাবেক মেয়র আতিকুল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য থাকার কারণে শত দুর্নীতি করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি ও ডিএনসিসির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


জানা গেছে, ২০২২ সালে পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেন আতিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে চারজন বিশেষজ্ঞ থাকলেও নিজের বড় ভাইয়ের ছেলে ইমরান আহমেদই ছিলেন ব্যতিক্রম। অন্যদের মতো বিশেষজ্ঞ না হয়েও তিনি নিয়োগ পান। নিজের মেয়ে বুশরা আফরিনকে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক মেয়র। বিতর্কের মুখে মেয়রকন্যা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর কাজ করবেন বলে জানায় ডিএনসিসি।

২০২৩ সালের শুরুতে ডিএনসিসির ১৯তম বোর্ড সভায়, বৃক্ষরোপণের জন্য শক্তি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি অনুমোদন করেন। ওই চুক্তির অধীনে সবুজায়ন ও পরিবেশ উন্নয়নে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পরে সবুজায়ন সংক্রান্ত আরও একটি প্রকল্প দেওয়া হয় শক্তি ফাউন্ডেশনকে। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হুমায়রা ইসলাম সাবেক মেয়র আতিকুলের শ্যালিকা। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন আতিকুলের ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল হোসেন, ভাগ্নে ইমরান ও মেয়ে বুশরা আফরিন।

ভাগিনা তৌফিকের মাধ্যমে ঠিকাদার ম্যানেজসহ সিটি করপোরেশনের প্রায় সব ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন আতিক। ঠিকাদার ও কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাকে দ্বিতীয় মেয়র হিসেবেই চিনতেন। তার কথায় কর্মকর্তারা উঠতেন-বসতেন। দেশ-বিদেশে সিটি করপোরেশনের যত বড় কর্মসূচি হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই ভাগিনাকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিটি করপোরেশনের কোনো পদে না থেকেও সব কর্মকাণ্ডে ছিল তৌফিকের নিয়ন্ত্রণ। এমনকি কর্মকর্তাদের নিজস্ব সভায়ও উপস্থিত থাকতেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল’ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-সিএলডিপির আমন্ত্রণে ডিএনসিসির ১০ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন তৌফিক। গেল ৯ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোরিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে নগর ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল সফরেও আতিকের সঙ্গী ছিলেন তৌফিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঠিকাদারের সঙ্গে দেনদরবার করার কাজ করতেন তৌফিক ও মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব-এপিএস ফরিদ উদ্দিন। সাবেক মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব ফরিদ উদ্দিনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন। এই সংগঠনের ব্যানারে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম করেন মেয়র। ২০২১ থেকে ২২ সালের মধ্যে বিশেষ অনুদান হিসেবে এই সংগঠনকে অন্তত ২২ লাখ টাকা দেয় ডিএনসিসি। এরপর আরও বেশ কয়েকবার অনুদান দেওয়া হলেও সেই কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা ধারণা করছেন, করপোরেশন থেকে চলে যাওয়ার আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করেন মেয়রের লোকজন। সে সব নথিতে তাদের আরও অনেক অপকর্ম রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ