আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১৪/০২/২০২৫ ১২:১৩পি এম
হাসিনা সরকারের কঠোর পরিকল্পনা: ৫ আগস্টের 'মার্চ টু ঢাকা' ঠেকাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বিত
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তীব্র প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এই কর্মসূচি প্রতিরোধে আগের দিন (৪ আগস্ট) দুই দফায় অনুষ্ঠিত হয় একটি জরুরি বৈঠক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করা হবে। পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিজিবি একযোগে কর্মসূচি দমনে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে ওই দিনটির ঘটনার চিত্র। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী একযোগে এই আন্দোলন দমন করতে প্রস্তুত ছিল, তবে পুলিশ জানত না যে, শেখ হাসিনার সরকারের পতন প্রায় অনিবার্য হয়ে গেছে।
৪ আগস্ট সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। তারা আলোচনা করেন কীভাবে ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঠেকাতে পুরো রাজধানী ঢাকা অবরুদ্ধ করা হবে। বৈঠকের পর, সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় কঠোর কারফিউ জারি করা হবে এবং তা কোনো বিরতি ছাড়াই চলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিনই একটি বিবৃতি দেন, যেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দেশের জনগণকে এই "সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন" করার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর আশুলিয়ার একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ এবং সেগুলোর পোড়ানোর ঘটনার সত্যতা যাচাইকৃত ভিডিও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আরও একটি বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে (গণভবন)। বৈঠকে নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন এবং তাঁরা আবারও নিশ্চিত করেন যে, ঢাকার প্রবেশপথগুলো সাঁজোয়া যান দিয়ে অবরুদ্ধ করা হবে এবং বিক্ষোভকারীদের ঢাকায় প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনী যৌথভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রস্তুত ছিল।
সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর মহাপরিচালক ৫ আগস্ট রাত ১২:৫৫ মিনিটে বিজিবির মহাপরিচালককে দুটি জরুরি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠান, যা পরিস্থিতি আরো তীব্র করে তোলে।
এই সব প্রস্তুতির মাধ্যমে, শেখ হাসিনার সরকার সেদিনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি একযোগে কাজ করার পরিকল্পনা নেয়।