আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১০/০২/২০২৫ ১১:০১পি এম
লেডি হিটলারের’ রক্তাক্ত শাসন: গণহত্যা, গুম-খুন ও স্বৈরাচারের কালো অধ্যায়
বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার শাসনামল এক রক্তাক্ত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ পরিসংখ্যান, যেখানে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শাসনামলে গুম, খুন, গণহত্যা এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে।
রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৯৯, আহত ৬৯৭৯
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৯৯ জন নিহত এবং ৬৯৭৯ জন আহত হয়েছেন। ১৫ বছরের শাসনামলে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে গুম-খুনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতার শেষ পাঁচ মাসেও কমপক্ষে ২০ জনকে গুম করা হয়েছিল।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ভারতের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন হাসিনা। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে সরকার পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালায়, যার ফলে শত শত নিরীহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হন।
১৫ জুলাই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে এক পুলিশ সদস্য সরাসরি গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় হাজার হাজার মানুষ আহত হন।
১৫৮১ জনের মৃত্যু, ১০৫ জন শিশু নিহত
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০৫ জন শিশু। গুলিবিদ্ধ শিশু সামির, আবদুল আহাদ, রিয়া গোপ ও মোহাম্মদ রাসেলসহ আরও অনেকে নিহত হন। ছাত্রদের দমনে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়, যা ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়।
চোখ নষ্ট হয়েছে ৫৫০ জনের, অঙ্গহানি বহু মানুষের
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ৫৫০ জনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, বহু আন্দোলনকারীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে।
একনায়কত্বের শাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে। বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণে এনে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল প্রহসনমূলক, যেখানে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।
গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা দমন
হাসিনা সরকারের সময় সাংবাদিকরা হামলা, হয়রানি ও গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত কঠোর সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে।
নির্বাচনি প্রহসন ও বিরোধী দলের দমন-পীড়ন
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যাপক হামলা ও গ্রেফতার চালানো হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ১৮০০ বিরোধী নেতা-কর্মীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দুর্নীতির রাজত্ব ও লুটপাট
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা, মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচার করেছে।
শেখ হাসিনার শাসনকাল এক ভয়ঙ্কর দুঃশাসনের নাম, যা ইতিহাসে ‘লেডি হিটলারের’ রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। জনগণের মুক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার একনায়কত্বের অবসান ঘটলেও, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কান্না থামেনি।