আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১২/০২/২০২৫ ১০:৪৩পি এম
আয়নাঘরেই আটকে রাখা হয়েছিল, চিনতে পারলেন নাহিদ ও আসিফ
ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিখোঁজ হওয়া শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অবশেষে সেই গোপন টর্চারসেলকে চিনতে পেরেছেন, যেখানে তারা বন্দি ছিলেন। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে ডিজিএফআইয়ের সেই দুই টর্চারসেল চিহ্নিত করেন তারা।
গুমের শিকার হয়েছিল দুই শিক্ষার্থী
গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নাহিদ ও আসিফকে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর তারা নিখোঁজ ছিলেন দীর্ঘদিন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তাদের সন্ধান চেয়ে আন্দোলন করলেও, সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানা যায়, তাদেরকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) আয়নাঘর নামক বিশেষ টর্চারসেলে আটকে রাখা হয়েছিল।
আয়নাঘর পরিদর্শনে নাহিদের অভিজ্ঞতা
পরিদর্শনের পর নাহিদ জানান, তাকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, তার একপাশে টয়লেট হিসেবে একটি বেসিনের মতো স্থাপনা ছিল। সেই সময় সেখানে দিনের পর দিন তাকে অন্ধকারে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে, ৫ আগস্টের পর সেই সেলগুলোর মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয় এবং দেয়ালগুলোতে নতুন করে রং করা হয়।
আসিফের বক্তব্য
অন্যদিকে, আসিফ জানান, তাকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই কক্ষের দেয়ালের উপরের অংশে ছোট ছোট খোপ ছিল, যেখানে এক্সস্ট ফ্যান লাগানো ছিল। এই বন্দিদশায় তাদের উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালানো হয় বলে অভিযোগ তাদের।
গোপন টর্চারসেলের রহস্য উন্মোচিত
এই পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের এক অন্ধকার অধ্যায়ের পর্দা উন্মোচিত হলো। ডিজিএফআইয়ের এই গোপন টর্চারসেল সম্পর্কে নতুন তথ্য সামনে আসায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া
পরিদর্শনের পর নাহিদ ও আসিফের পরিবার গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, "আমরা চাই, এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।" এছাড়া বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং নাগরিক সমাজ এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশের সরকারকে স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আয়নাঘরের ইতিহাস এবং সেখানে চালানো নির্যাতনের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।