মেক্সিকোতে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভাষার মৃত্যু মানে ইতিহাসের মৃত্যু”। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইবারো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত এই আহ্বান জানান।

মেক্সিকোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচিতে বিদেশি কূটনীতিক, বাংলাদেশি প্রবাসী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, “ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি জাতির পরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা হয়েছে। এ ইতিহাস আমাদের গৌরব ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।” তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভাষার দ্রুত বিলুপ্তি আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের জন্য হুমকি। তাই ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি।

আলোচনা সভায় আইবারো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. অ্যারিবেল কনটেরাসের সঞ্চালনায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা অংশগ্রহণ করেন। আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রদূত লি ডি'জেরো রবার্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত বেরিল রোজ সিসুলু এবং মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত জামাল শরিফ উদ্দিন জোহান তাদের নিজ নিজ দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেক্সিকোর সাবেক সিনেটর ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাচিত গালভেজ রুইজ, আইবারো আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জুয়ান ম্যানুয়েল গঞ্জালেজ এবং মেক্সিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ফ্রান্সিসকো মস্কেদা ব্রিটো। তারা বিশ্বব্যাপী ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।

দিনের শেষে রাষ্ট্রদূত মুশফিক মেক্সিকো সিটিতে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাশাপাশি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূতের এই আহ্বান ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্বকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে ভাষা শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, বরং জাতির আত্মপরিচয়েরও প্রতীক।