শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২০/০২/২০২৫ ০৫:১৩পি এম

ঢাকার রাজপথে দাবির ঝড়: থামছেই না বিক্ষোভের ঢেউ!

ঢাকার রাজপথে দাবির ঝড়: থামছেই না বিক্ষোভের ঢেউ!
ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০২5:
ঢাকার রাজপথ যেন এখন এক বিশাল দাবিপত্রের বই! সরকারের পতনের পর থেকে রাজপথে নেমেছে হাজারো মানুষ, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমিক, পেশাজীবী থেকে বঞ্চিত নাগরিক—সবার একটাই লক্ষ্য, নিজেদের অধিকার আদায় করা। বিগত ছয় মাসে রাজধানীতে হয়েছে অন্তত ১৮০টি আন্দোলন। প্রতিদিনের চিত্রেই যেন বিক্ষোভ আর সড়ক অবরোধের প্রতিচ্ছবি।

বিক্ষোভের শহর ঢাকা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নিত্যনতুন দাবিতে উত্তাল ঢাকার রাজপথ। কোনও যুক্তিসঙ্গত, কোনও অযৌক্তিক দাবি নিয়ে প্রতিদিনই আন্দোলনে নেমে পড়ছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। সড়ক অবরোধ যেন নিত্যদিনের নিয়ম। কখনও কখনও একই দিনে ১৭টি স্থানে সড়ক অবরোধ হয়ে পড়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সচিবালয় থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোর সামনে অবস্থান কর্মসূচি, অনশন কিংবা বিক্ষোভ—সবই এখন সাধারণ চিত্র। শাহবাগ হয়ে উঠেছে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে প্রতিদিনই ভিড় করছে নানা দাবি নিয়ে শত শত মানুষ।

যানজট ও জনদুর্ভোগের শেষ কোথায়?
রাজপথ অবরোধের ফলে রাজধানীতে যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থেকে ক্ষুব্ধ নগরবাসী, কিন্তু আন্দোলনকারীরা দিচ্ছেন না কোনো কর্ণপাত। আন্দোলন যেন এখন এক বিশাল দোদুল্যমান শক্তি, যা পুরো নগরকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আন্দোলনের চাপে প্রায় নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কিন্তু প্রতিদিনের লাগাতার আন্দোলন সেই চেষ্টাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

প্রধান উপদেষ্টা এক ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে অনুরোধ করে বলেন, “আপনাদের দাবি আমরা বিবেচনা করবো। কিন্তু ঘেরাও করে আমাদের কাজ বন্ধ করবেন না। আমাদের সময় দিন।” কিন্তু আন্দোলনকারীদের সাড়া মেলেনি।

শিক্ষা ও শ্রমিক আন্দোলন জোরদার
সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে, যা ঢাকার বিভিন্ন সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে আরও কঠোর আন্দোলনে যায়।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের আন্দোলন চলে টানা ৯ দিন।
আনসার সদস্যরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করে।
বিডিআর সদস্যদের পরিবার ও চাকরিচ্যুত কর্মীরাও রাজপথে নেমে আসেন।
অভিযোগের তীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের দিকে?
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলনের আড়ালে রয়েছে সুক্ষ্ম রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। অনেকে মনে করছেন, আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে আবারও আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, পতিত সরকারের কিছু প্রশিক্ষিত কর্মী আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অঢেল অর্থের মালিক হয়ে এই অশান্তি সৃষ্টি করছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের ফায়দা লুটার চেষ্টা চলছে।”

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, যারা এতদিন বঞ্চিত ছিলেন, তারা এখন দ্রুত তাদের দাবি পূরণে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আন্দোলনের নামে অরাজকতা ঠেকাতে সরকারের উচিত ছিল শক্ত অবস্থান নেওয়া।
ড. তৌহিদুল হক বলেন, “দাবি-দাওয়া ঠিক আছে, কিন্তু জনভোগান্তি যেন কোনোভাবেই না হয়। জিম্মি করে অধিকার আদায়ের এই সংস্কৃতি বদলাতে হবে।”
শেষ কথা
ঢাকার রাজপথের এই অস্থিরতা কোথায় গিয়ে থামবে? আন্দোলন কি সত্যিই জনগণের দাবি পূরণের লক্ষ্য নিয়ে চলছে, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো পরিকল্পনা? সাধারণ মানুষ শুধু শান্তি চায়, আর সরকার চায় স্থিতিশীলতা। কিন্তু এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।

আপনার মতামত কী? নিচে কমেন্ট করে জানান!

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ