গাজায় যুদ্ধবিরতি: বিশ্বনেতাদের স্বাগত, পুরো কৃতিত্ব দাবি করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
কুরআনের সুরা আল-ইনশিরাহ-এর একটি আয়াত—"নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে আসে স্বস্তি"—গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত জনজীবনের বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের পর অবশেষে শান্তি ফিরে আসছে। ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য আশার আলো জ্বালিয়ে, হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
গাজার আনন্দমুখর উৎসব
যুদ্ধবিধ্বস্ত খান ইউনিস শহরের রাস্তায় নেমে এসেছে আনন্দমুখর জনস্রোত। ইসরায়েলি মধ্যস্থতাকারীদের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা শোনার পরপরই রাতভর উৎসবে মেতে উঠেছে শহরটি। ছোট ছোট শিশুরা নাচ-গানে আর স্লোগানে ভরিয়ে তুলেছে চারপাশ।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, "আমরা অত্যন্ত খুশি। বোমা হামলা, মৃত্যুর সেই ভয়াবহ দিনগুলোর অবসান ঘটেছে। এখন আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব এবং পরিবারের জীবিত সদস্যদের সঙ্গে আবার মিলিত হব। পুরোনো জীবনে ফিরে গিয়ে শান্তিতে বাস করতে চাই।"
ইসরায়েলের উচ্ছ্বাস ও উদ্বেগ
যুদ্ধের সমাপ্তির খবরে তেল আবিবেও ছিল উচ্ছ্বাস। বন্দি আত্মীয়দের ফিরে পাওয়ার আশায় অনেক পরিবার আনন্দ প্রকাশ করেছে। তবে তাদের অনেকেই এখনও প্রিয়জনদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও কূটনৈতিক উদ্যোগ
গত বুধবার কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানান।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন: যুদ্ধবিরতিকে নিজের "জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ" বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, "এই যুদ্ধবিরতি আমেরিকার কঠোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল।"
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প: ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে "ঐতিহাসিক" আখ্যা দিয়ে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে এর পুরো কৃতিত্ব দাবি করেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি: যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনে দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ওপর জোর দেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার: রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত "শান্তির বার্তা" হিসেবে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দ্র ডে ক্রু, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান—এছাড়াও অনেক নেতা যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে আগামী রবিবার থেকে। তিনটি পর্যায়ে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে:
১. প্রথমে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ৩৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে।
২. দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
৩. তৃতীয় পর্যায়ে নিহত বন্দিদের মরদেহ ইসরায়েলকে হস্তান্তর করা হবে।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গাজার আকাশে শান্তির সূর্যোদয় ঘটতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত বিশ্বজুড়ে স্বস্তি ও আনন্দ বয়ে এনেছে। তবে এর টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অটল সমর্থন প্রয়োজন।