রাজাপুরে ইউএনও রাহুল চন্দের গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল আন্দোলন
ঝালকাঠির রাজাপুরে ইউএনও রাহুল চন্দের গ্রেপ্তারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ ও জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধারা। সাভারে গত বছরের সংঘটিত গণহত্যা এবং স্কুলছাত্র আলিফ আহমেদ সিয়ামের হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও রাহুল চন্দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনগণ।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন জুলাই যোদ্ধারা, বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সাভারে ৫ আগস্ট ছাত্র হত্যার মামলায় রাহুল চন্দ ৫নং আসামি হলেও এখনও তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে বহাল আছেন। এটি জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। তাই অবিলম্বে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন জুলাই যোদ্ধা মোহাম্মদ মুসা ও মোস্তাফিজ, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জাকারিয়া সুমন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বাইজিদ, জামায়াত নেতা আব্দুল আলীম এবং ইসলামি ছাত্রশিবির সভাপতি সোলায়মান প্রমুখ। রাজাপুরে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আজম সৈকত বলেন, “রাহুল চন্দকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এবং রাজাপুর থেকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। হত্যাকারীদের রাজাপুরে কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।”
এদিকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, “একজন এজাহারভুক্ত আসামি কীভাবে প্রশাসনের দায়িত্বে বহাল থাকেন তা বোধগম্য নয়। এতে প্রমাণ হয় ফ্যাসিবাদী শক্তি এখনও প্রশাসনের ভেতর সক্রিয় রয়েছে। অবিলম্বে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।” ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাহুল চন্দের মতো দলীয় ক্যাডার ও গণহত্যার নির্দেশদাতাদের প্রশাসনে বহাল রাখা জাতির জন্য লজ্জাজনক। আমরা তার গ্রেপ্তার ও অপসারণ চাই।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার সাভারে ঢাকামুখী লংমার্চে গুলি চালায় পুলিশ। এতে সাভার ডেইরি ফার্ম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আলিফ আহমেদ সিয়াম নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বুলবুল কবির সাভার থানায় মামলা (নং-৫১) দায়ের করেন। মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১নং এবং তৎকালীন সাভারের ইউএনও রাহুল চন্দ ৫নং আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হন।
বর্তমানে ঝালকাঠির রাজাপুরে দায়িত্ব পালন করছেন রাহুল চন্দ। তাকে গ্রেপ্তার ও অপসারণের দাবিতে গোটা রাজাপুর এখন আন্দোলনমুখর হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলন শুধু রাজাপুরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তুলেছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের পেছনে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং এটি প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই আন্দোলন কীভাবে গতি পায় এবং প্রশাসন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন রাজাপুরের দিকে।