লুৎফুজ্জামান বাবরকে নিয়ে যা বললেন নজরুল ইসলাম খান
লুৎফুজ্জামান বাবর, যিনি ১৭ বছর আগে একটি তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে কারাগারে যান, অবশেষে মিথ্যা মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন। গত ছয় বছর ধরে তাকে একটি নিন্দনীয় সেলে রাখা হয়েছিল। এই দীর্ঘমেয়াদি নির্যাতন, অনিশ্চিত জীবন, দুইটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড এবং একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো অভিযোগ তার জীবনের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। এই চাপ ও মিথ্যার অভিযোগে তিনি প্রায় বৃদ্ধ হয়ে গেছেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি যে, সম্মানিত আদালত তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাকে মুক্তি দিয়েছে।”
বিএনপির ১৬ বছরের সংগ্রাম
বিএনপি গত ১৬ বছর ধরে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জুলাই এবং আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণজাগরণে আন্দোলন একটি নতুন ধাপে পৌঁছেছে। অবশেষে, ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং এই ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এখন বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে।
মুক্তির পর লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রথম কাজ
মুক্তির পর লুৎফুজ্জামান বাবর তার বাড়ি বা পরিবারের কাছে না গিয়ে দলের নেতার সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং দলের জন্য তার আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বাবরের এই কাজ আমাদের দলের জন্য এক অনুপ্রেরণা। আমরা প্রার্থনা করি যেন আমাদের অন্য নেতাকর্মীদেরও মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি মেলে।”
নির্যাতনের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীরা
নজরুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে এধরনের নির্যাতন আর কেউ সহ্য করবে না। একটি গণতান্ত্রিক এবং মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।”
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন
জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই দেশ একদলীয় শাসনের অধীনে চলে যায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই একদলীয় শাসনের কবরে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।”
ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন এবং গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ
তিনি আরও বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছরের সংগ্রামের পর দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ দেশটিকে একটি নরকে পরিণত করেছে। এই শাসন থেকে মুক্তির জন্য বিএনপি ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে না। এটি সম্ভব হবে সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা আশাবাদী যে, বাবরের মতো আরও অনেক নেতাকর্মী মুক্তি পাবেন এবং তারা গণতন্ত্র ও মানবিকতার বাংলাদেশ গঠনে অবদান রাখবেন।”
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে সুপারিশ করবেন, সেগুলো রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
লুৎফুজ্জামান বাবরের মুক্তি বিএনপির আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। তার মুক্তি নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীদের জন্য একটি উদাহরণ এবং প্রেরণা। বিএনপির লক্ষ্য হলো একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে সকলের জন্য সমান অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।