হাওয়া ভবনের গল্প: একটি নামকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাওয়া ভবনের নামটি একধরনের রহস্য এবং বিতর্কের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক অভিজানের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই ভবনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং প্রতিবেশী ভারত সরকারের কৌশলগত আক্রমণের কেন্দ্রে ছিল। বিশেষ করে বিএনপির নেতা তারেক রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার, মামলা এবং ষড়যন্ত্রের মূল ভিত্তি ছিল এই হাওয়া ভবনের নাম। এই নাম ব্যবহার করে বিএনপিকে দাবিয়ে রাখার প্রয়াসে কোনো প্রকার চেষ্টাই বাদ রাখা হয়নি।
ঢাকার বনানীতে অবস্থিত হাওয়া ভবনটি মূলত বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি কেন্দ্র ছিল। এটি তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলীয় কৌশল, নীতি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০০১-২০০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাওয়া ভবনের নামটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর নামটি তখন থেকেই আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকদের কাছে বিএনপির দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
আওয়ামী লীগ এবং ভারত সরকার হাওয়া ভবনের নামকে একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য। তারেক রহমানকে "হাওয়া ভবনের দাপুটে রাজনীতিক" হিসেবে প্রচার করা হয়। এমনকি এই নাম ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তারেক রহমানকে ১৭ বছরের বেশি সময় লন্ডনে নির্বাসিত থাকতে হয়েছে, যেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন।
খালেদা জিয়াকেও এই ভবনের নাম ব্যবহার করে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সরকার এবং ভারত সরকার মিলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যাতে বিএনপির জাতীয় নেতাদের রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা যায়। অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি হাওয়া ভবনের নামটি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক কোনো নাম হতো, যেমন ‘বাইতুল ফালা’ বা ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’, তবে কি এটি এত বিতর্কিত হয়ে উঠত? ধর্মীয় বা ঐতিহ্যবাহী নামের প্রতি মানুষের সম্মান এবং আবেগের কারণে এটি হয়তো এতটা রাজনৈতিক অপব্যবহার হতে পারত না। হাওয়া ভবনের নামটি স্রেফ একটি সাধারণ নাম হলেও এটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত করে তোলা হয়েছে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতিটি মামলাই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এসব মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা হয়নি। প্রমাণের অভাবে মামলাগুলো টিকে থাকেনি, যা বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে এই বিশ্বাস আরও মজবুত করেছে যে, এগুলো ছিল নিছক রাজনৈতিক হয়রানি।
খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও একই কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে। তাকে দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত করে জেলে প্রেরণ করা হয়, যদিও সেসব মামলার বেশিরভাগই ছিল দুর্বল এবং প্রমাণের অভাবে ধসে পড়েছে।
হাওয়া ভবনের গল্পটি আসলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং ষড়যন্ত্রের একটি উদাহরণ। এটি দেখায়, কীভাবে একটি নাম ব্যবহার করে একটি দলের পুরো নেতৃত্বকে চাপে রাখা এবং রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে এই ষড়যন্ত্রের মধ্যেও তারেক রহমান ও বিএনপি সমর্থকরা হাল ছাড়েননি। তাদের মতে, সত্য শেষ পর্যন্ত প্রকাশিত হবে এবং হাওয়া ভবনের নামটি রাজনৈতিক নিপীড়নের ইতিহাস হিসেবে থেকে যাবে।