ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, পুলিশ নামবে কবে
রাজধানীর সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত পাঁচ দিন ধরে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থীদের এ ভূমিকায় সন্তুষ্টির পাশাপাশি অসন্তোষও প্রকাশ করেন অনেকে। এখন সবার প্রশ্ন ট্রাফিক পুলিশ ফিরবে কবে?
ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত পাঁচ শতাধিক পুলিশ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। অনেক থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট (সোমবার) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ট্রাফিক পুলিশসহ সব ইউনিটের পুলিশ সদস্য জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কায় কর্মবিরতীতে চলে যান। এরপর থেকে সড়কে শৃঙ্খলার হাল ধরেন শিক্ষার্থীরা। এতে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষার্থীরা সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজে নিজেদের যুক্ত করায় যেমন বাহবা পাচ্ছেন, তেমনই অসন্তোষ প্রকাশ করছেন অনেকে। এই অক্লান্ত পরিশ্রমের কাজ আর কতদিন করবে শিক্ষার্থীরা! ট্রাফিক পুলিশ ফিরবে কবে? এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের।
শনিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, প্রধান সড়কসহ গলিগলিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সড়কের আবর্জনা পরিষ্কার করা ও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তাদের পাশাপাশি অনেক অভিভাবক, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, সেনাবাহিনীর সদস্য, স্কাউট, বিএনসিসি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এ কাজ করছেন। তারা প্রতিটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে লেন ভিত্তিক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছেন। রিকশা, মোটরসাইক-সিএনজি এবং প্রাইভেট কার ও বাসের জন্য আলাদা লেন নির্ধারণ করে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছেন।
টানা কয়েকদিন ধরে রাস্তায় রোদ-বৃষ্টি ও ধুলাবালির মধ্যে কাজ করায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মগবাজার এলাকায় গুলশান কমার্স কলেজ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সেতু আহমেদ বলেন, গত তিনদিন ধরে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছি। সড়ক শৃঙ্খলায় সকাল ১০ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তায় আছি। শৃঙ্খলা ফেরাতে সারাদিন কথা বলতে গিয়ে গলা বসে গেছে। শরীরে জ্বর অনুভব করছি।
বিজয় সরণির মোড়ে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী গাড়ির সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেখানে রফিকুল ইসলাম নামে একজন ছাত্র বলেন, আমরা ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছি। গাড়ির শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছি। যতক্ষণ না ট্রাফিক পুলিশ এখানে আসবে, ততক্ষণ আমরা দায়িত্ব পালন করবো। আমরা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছি। একটি সকালে আরেকটি বিকাল তিনটার পর দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
কাওরান বাজার ও পান্থপথ এলাকায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, প্রথম দিকে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করতে বেশ ভালো লেগেছে। এটা খুব কঠিন কাজ। আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে কিছু করার নেই। দেশ আমাদের, দেশকে ভালো ও সুন্দর রাখার দায়িত্বও আমাদের। আরেক শিক্ষার্থী সুমন আহসান বলেন, কয়েকদিন পর আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। ক্লাস শুরু হবে। তখন আমরা চাইলেও এমনভাবে সড়ক নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারবো না। তাই আমরা চাই, দ্রুত ট্রাফিক পুলিশ ফিরে আসুক।
সড়ক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্টির পাশাপাশি অসন্তোষও প্রকাশ করেন অনেকে। তারা বলেন, রাস্তায় যারা ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। তারা সবাই আলাদা। এখানে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা কমান্ড নেই। ফলে যে যার মতো করে কাজ করছে। অনেক যানবাহনকে বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রাস্তায় নেমে অনেকে খারাপ ব্যবহারও করছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশ কর্মস্থলে কবে ফিরবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, সরকার পতনের পর থেকে পুলিশের সব ইউনিট থেকে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে গিয়ে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, পুলিশের পোশাকের পরিবর্তনসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন। শনিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে। তাদের একজন সমন্বয়ক নায়েক সজীব সরকার বলেন, আমরা চাই মাঠে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে। তবে বিদায়ী সরকার বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে অনেক খারাপ কাজ করিয়েছে। আমাদের দিয়ে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করিয়েছে। সেসব কারণে সাধারণ মানুষও আমাদের ওপর নানাভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে অনেক পুলিশ সদস্য হত্যা করেছে। ফলে আমরা এখন নিরাপত্তা ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের দাবি করছি। যাতে করে আর কখনও কোনও সরকার আমাদের অন্যায়ভাবে মানুষ মারার কাজে ব্যবহার করতে না পারে। পুলিশ যেন জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করতে পারে।