শেখ হাসিনা এখন ভারতের জন্য ‘বিষফোঁড়া’
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মাত্র কিছুদিন আগে, ভারতের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে যা শিরোনাম ছিল “ডিসটার্বিং ইন ঢাকা।” ওই সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতির বাতিলের পর সহিংসতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনার উল্লেখ করা হয় এবং ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। সম্পাদকীয়তে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যে, "ভারতকে এখন হাসিনার পরের বাংলাদেশ নিয়ে ভাবতে হবে।"
শেখ হাসিনার পতন এবং বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ভারত দ্রুতই নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন জানায়। মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে শুভেচ্ছা জানান এবং দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার অঙ্গীকার করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করতে থাকে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে ভারতের মেনে নেওয়ার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে, বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তৈরির কাজ চলছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির পর। ভারত, বিএনপি'র সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। সালাউদ্দিন আহমেদের মতো বিএনপি নেতা ভারতের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, ভারতের জন্য বড় একটি উদ্বেগ হলো বাংলাদেশে তার বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে ভারতের কোটি কোটি ডলারের প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে বাংলাদেশের নতুন সরকার ভারতীয় প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা দেয়নি, যা ভারতের পক্ষে একটি ইতিবাচক দিক বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানীতে অবস্থান করছেন এবং তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে, ভারতের সাবেক কূটনীতিবিদ ড. মোহন কুমার মনে করেন, এই সংকটকেও ভারত একটি সুযোগে পরিণত করতে পারে, শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতা থেকে ভারতের "প্রতিবেশী প্রথম" নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।