বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
Verified আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০২/০৯/২০২৪ ০২:৩৫পি এম

কেটে গেছে ২৭ দিন, শেখ হাসিনার হাতে আছে ১৮ দিন, অপশন মাত্র দুটি

কেটে গেছে ২৭ দিন, শেখ হাসিনার হাতে আছে ১৮ দিন, অপশন মাত্র দুটি
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন, এখন ভারত অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই হত্যার অভিযোগ। গণহত্যার মামলাগুলি আন্তর্জাতিক আদালতে নেয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তার কূটনৈতিক (লাল) পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় ভারত থেকে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। ভারতের আইন অনুযায়ী শেখ হাসিনা বিনা ভিসায় সে দেশে ৪৫ দিন থাকতে পারবেন, যার মধ্যে ইতিমধ্যে ২৭ দিন কেটে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। হয় তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন, নয়তো দেশে ফিরে আসবেন। ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প নেই।

ভারত এখন কী করবে? তারা কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? যেমনটা দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালে? হাসিনা ছয় বছর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রয়ে ছিলেন।

জানা যায়, ভারত এখন একটি উভয় সংকটে রয়েছে। তারা কি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি করবে? যে সম্পর্ক ইতিমধ্যে অনেক তিক্ততায় পরিণত হয়েছে! ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট আগের থেকে অনেক বেশি এখন। বহির্বিশ্বেও ভারতের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

ভারত কি শেখ হাসিনাকে প্রোটেকশন দেবে? পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় শেখ হাসিনা এখন উদ্বাস্তু। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা খুবই কঠিন। চীন এবং ভারত হাসিনাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। দুটো দেশই হেরেছে। মাঝখানে জিতে গেছে অন্য একটি দেশ। চীন সতর্ক হয়ে গেছে। ভারত হাসিনাকে ঘিরে এখনো স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে।

দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেননি। এই অবস্থায় হাসিনা যদি ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তখন তাদের নীতি কী হবে তা নিয়ে প্রশাসন দোটানায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দ্বিধাবিভক্ত। হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের উপর চাপ বাড়বে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এরকমই একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ভারতের উদ্বেগ সেভেন সিস্টার নিয়ে। হাসিনার জমানায় স্বস্তি এসেছে। বিপ্লবের পথে গিয়ে যেটুকু অর্জন, তা হারিয়ে যেতে পারে। তাদের ভয়, হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে গিয়ে চীনের আগমন ঘটে কিনা! সে নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নীরবেই তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। ঢাকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যার সঙ্গে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনি চাইলে অন্তত একশ'টি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে যখন তখন কথা বলতে পারেন। এ কারণে ভারত সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে আবেগতাড়িত না হয়ে বাস্তব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পরিবর্তিত এই অবস্থায় হাসিনার দেশে ফেরা ছাড়া আর কী বিকল্প রয়েছে? গণহত্যার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হতে চলেছেন। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশ তাকে গ্রহণ করতে চাইবে না। সময় যত যাচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয়দের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক নেই। যেটুকু ছিল বাংলাদেশের সঙ্গেই। ভুল নীতি কৌশল গ্রহণ করে সেটুকু হারাতে চায় না ভারত। কোটা বিরোধী আন্দোলন হাসিনার ভবিষ্যৎ যেমন ফিকে করে দিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতের নেতৃত্ব বেশ চিন্তিত বলেই মনে হচ্ছে। উত্তরে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান। পূর্বে আরেকটি নিরাপত্তা ফ্রন্ট ভারত খুলবে কিনা তা নিয়ে হিসাবনিকাশ চলছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা যদি করা হয় তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র গভীর নজর রাখছে সর্বশেষ ঘটনাবলির উপর।
সূত্র: মানবজমিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ