শেখ পরিবারের সদস্যদের বর্তমান অবস্থান অবশেষে জানা গেল
জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতে শুরু করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামেন। তবে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সাড়া না দিয়ে বলপ্রয়োগ করতে থাকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়, যার ফলে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সরকারের কঠোর অবস্থানের পরেও, শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবির মাধ্যমে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে, সরকারের বলপ্রয়োগ অব্যাহত থাকলে আন্দোলনটি সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপান্তরিত হয়। শেষ পর্যন্ত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার চাপের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৫ আগস্টের সেই দিনে পদত্যাগের পর দেশ ছাড়ার জন্য শেখ হাসিনার হাতে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় ছিল। শেখ হাসিনাকে নিয়ে সামরিক বিমান যখন যাত্রা শুরু করে, তখন সেখান থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে আগারগাঁওয়ে লাখো মানুষের স্রোত। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গণভবন এবং সংসদ ভবন এলাকা আন্দোলনকারী জনতার দখলে চলে আসে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মন্ত্রী-এমপি এবং সিনিয়র নেতাদের অবস্থান নিয়ে সবার মাঝে প্রশ্ন দেখা দেয়। জানা গেছে, অনেক সিনিয়র নেতা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমনকি সরকার পতনের আগেই অনেকে বিদেশে চলে গেছেন।
শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্যও ৫ আগস্টের আগেই দেশ ছেড়ে চলে যান। বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই বর্তমানে দেশে নেই। তারা ৫ আগস্টের আগে-পরে দেশ ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, আর তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত। সরকারের পতনের সময় সায়মা দিল্লিতেই ছিলেন, এবং সেখানে তার মা ও খালার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রী হিসেবে লন্ডনে বসবাস করছেন, এবং শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক সরকার পতনের সময় দেশে ছিলেন না।
গত ৩ আগস্ট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস। শেখ ফজলে নূর তাপসের বড়ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ, যিনি আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান, তিনিও দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুবলীগের একজন নেতা জানিয়েছেন, ফজলে শামস পরশ আন্দোলন চলাকালে কোনো এক সময় তিনি বিদেশে গেছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশ ছাড়তে পারেননি বলে জানা গেছে। বরিশালের প্রভাবশালী নেতা আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন, তবে তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন।
বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি এবং তিনি বর্তমানে দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থান করতে দেখা গেছে।