বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০২/০২/২০২৫ ০৩:১৪পি এম

শরীয়তপুরে কলেজছাত্রীকে বেধড়ক পেটালেন আ.লীগ নেতা: পুলিশ তদন্তে নেমেছে

শরীয়তপুরে কলেজছাত্রীকে বেধড়ক পেটালেন আ.লীগ নেতা: পুলিশ তদন্তে নেমেছে
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক কলেজছাত্রী মাহিমা আক্তারকে নৃশংসভাবে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব জমাদ্দার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর মামা মো. নাসির জমাদ্দার বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনা ও হামলার কারণ:

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাজিরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আহাদ্দি বয়াতি কান্দি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত মাহিমা আক্তার পালেরচরের বাসিন্দা মাইনদ্দিন মোল্লার মেয়ে। তিনি বিকেনগর বঙ্গবন্ধু কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং জাজিরা পৌরসভার মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। হামলার সূত্রপাত ঘটে সম্প্রতি হাবিব জমাদ্দারের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের এবং পুলিশের তদন্তে তার দায় মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কিছুদিন আগে হাবিব জমাদ্দার স্থানীয় নিরীহ মানুষদের হয়রানি করতে বিভিন্ন নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশ তদন্তে গিয়ে মামলার সত্যতা খুঁজে না পাওয়ায় সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে হাবিব জমাদ্দার তার অনুসারীদের নিয়ে হামলা চালান মাহিমার উপর, কারণ সে পুলিশকে সঠিক তথ্য প্রদান করেছিল।

আহত কলেজছাত্রীর সঙ্গে হামলা:

শুক্রবার দুপুরে হাবিব জমাদ্দার দেশীয় অস্ত্রসহ তার ছেলে ও অন্যদের নিয়ে কলেজছাত্রীর মামার বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনাক্রমে, মাহিমা তখন সাবেক কাউন্সিলরের বাড়িতে আশ্রয় নিতে যান, কিন্তু সেখানে তাকে আবারও মারধর করা হয়। এই সময় তার মামা এগিয়ে এসে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদের উপরও হামলা চালানো হয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহত মাহিমা এবং তার মামাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

বাবার দাবি:

হামলার পর আহত মাহিমার বাবা মাইনদ্দিন মোল্লা বলেন, “আমরা বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার জন্য সমস্যায় পড়ছিলাম, তাই আমার মেয়ে তার মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছিল। এইচএসসি পরীক্ষার আগে এমন নৃশংস হামলার শিকার হয়ে আমি সঠিক বিচার চাই।”

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া:

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সেরু জমাদ্দার বলেন, “হাবিব জমাদ্দার তার লোকজন নিয়ে মেয়েটিকে বেধড়ক মারধর করেছে। মেয়েটি প্রাণ বাঁচাতে আমার বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাকে মারধর করা হয়েছে।” মামলার বাদী নাসির জমাদ্দার বলেন, “আমার ভাগ্নি পুলিশকে সত্য কথা বলার কারণে তারা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়েছে। আমি হামলাকারীদের কঠিন শাস্তি চাই।”

হাবিব জমাদ্দারের বক্তব্য:

এ বিষয়ে হাবিব জমাদ্দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমার বাবা মারধরের শিকার হয়েছে এবং বর্তমানে আমি হাসপাতালে আছি।”

পুলিশের পদক্ষেপ:

জাজিরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুস সালাম জানান, থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ঘটনায় পুরো জাজিরা উপজেলায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হামলার শিকার কলেজছাত্রী এবং তার পরিবার বিচার প্রার্থী। পুলিশ, প্রশাসন এবং স্থানীয়রা যেন দ্রুত বিচার ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তা নিয়ে এখন সবার নজর।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ