আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৮/০১/২০২৫ ০২:০৯পি এম
২০২৪ সালে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ড: প্রাণ হারালেন ১৪০ জন, আহত ৩৪১
২০২৪ সালে বাংলাদেশের সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি দিন গড়ে ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ১৪০ জনের মৃত্যু এবং ৩৪১ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সারা বছরব্যাপী আগুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ৩৪টি গাড়ি ভাঙচুর এবং ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের বিপদের সংকেত।
বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও বিড়ি-সিগারেটের টুকরা প্রধান কারণ
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আগুন লেগেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগে, যা মোট অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৩৩.৯৮%। এর পরেই রয়েছে বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে আগুন, যার সংখ্যা ৪,১৩৯টি। এছাড়া, রান্নাঘরের চুলা থেকেও প্রায় ১১.৪৬% আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
এই সব কারণে মানুষের জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছে এবং তা প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অগ্নিকাণ্ডের মোট ২৬,৬৫৯টি ঘটনার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের কর্মীরা একাধিক অভিযান চালিয়েও এ সমস্যার পূর্ণ সমাধান করতে পারেননি।
সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে আবাসিক ভবনে
দেশব্যাপী অগ্নিকাণ্ডের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বাসাবাড়ি বা আবাসিক ভবনে। এ ধরনের ঘটনা মোট ২৬.৭৪% ছিল। এছাড়া খড়ের গাঁদা, রান্নাঘর, দোকান, হাট-বাজার, শপিং মল, এবং পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানেও আগুন লেগেছে। বিশেষ করে রান্নাঘরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেমন স্বাভাবিক, তেমনই পোশাকশিল্পের কারখানাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভীষণ উদ্বেগজনক।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আত্মবলিদান
অগ্নিনির্বাপণের কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২ জন কর্মী নিহত হয়েছেন এবং ৩৭ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের এই আত্মবলিদান দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। তবে, অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের কাজের সময় জনগণের সহায়তার অভাব এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড
২০২৪ সালের মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এই চার মাসে প্রতিদিন গড়ে ১০২টি আগুন লেগেছে। বিশেষত আগস্ট মাস ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক, যখন ২,১৬৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
ক্ষয়ক্ষতির বিস্তৃতি
অগ্নিকাণ্ডের কারণে সম্পদের ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে আবাসিক ভবন, খড়ের গাঁদা, রান্নাঘর, এবং বিভিন্ন দোকানে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং গ্যাসের লাইন লিকেজের কারণে বেশ কিছু বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেইসাথে, বাসে, ট্রেনে এবং লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পরিবহন খাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার গুরুত্ব বাড়িয়েছে।
জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক কর্মসূচি
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে জনগণকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তারা ১৮,৯৮৩টি মহড়া, ১৫,৬৮৩টি গণসংযোগ এবং ৭,৭৬৯টি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে অগ্নিনির্বাপণের বিষয়ে সচেতন করেছে। পোশাকশিল্প কারখানাগুলিতেও ৩,৯২১টি প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার পোশাকশ্রমিককে অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
কঠোর শাস্তি ও জরিমানা
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ২০২৪ সালে ১৪৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তাছাড়া ৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ বছর দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা গুলি প্রমাণ করেছে যে, দেশের প্রতিটি সেক্টরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা এবং নিরাপত্তার প্রতি মনোযোগী হওয়া জরুরি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয় কমানো সম্ভব হয়।