বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৫/০২/২০২৫ ০১:৫৯এ এম

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ট্রুথ কমিশন’ জরুরি: এমএসএফের সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের মতামত

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ট্রুথ কমিশন’ জরুরি: এমএসএফের সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরশাসনামলে সংঘটিত অন্যায়-অপরাধের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, মানবাধিকার রক্ষা এবং সমাজ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো আজ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সমাজে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘ট্রুথ কমিশন’ গঠনের দাবি উঠেছে, যা ট্রানজিশনাল জাস্টিস বা ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচারের অন্যতম প্রধান উপাদান।

আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) আয়োজিত ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস বা ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব গুরুত্বপূর্ণ মত উঠে আসে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত এমএসএফের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এই সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস’ কীভাবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে?

সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গবেষক এবং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিব) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শামসুল বারী। তিনি বলেন, “অশান্ত, অস্বাভাবিক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ট্রানজিশনাল জাস্টিস একটি কার্যকর ব্যবস্থা। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে দায়মুক্তির সংস্কৃতি দূর করে আইনের শাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। নাগরিক সমাজের ভূমিকা নির্ভর করে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। ট্রানজিশনাল জাস্টিসের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে ট্রুথ কমিশন গঠন, অপরাধীদের বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, অপরাধের চিহ্ন সংরক্ষণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার, ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।”

‘ট্রুথ কমিশন’ কেন প্রয়োজন?

শামসুল বারী বলেন, “স্বৈরশাসনের পতনের পর একটি নিরপেক্ষ ‘ট্রুথ কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন, যা স্বৈরশাসনামলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়-অপরাধের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে সমাজে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে দেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও যৌন অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে। মানবাধিকারকর্মীদের এখনই সক্রিয় হতে হবে, নাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ৫ আগস্টের আগে ও পরে যাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাঁদের জন্য মানবাধিকারকর্মীদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করা জরুরি।”

মানবাধিকারের গুরুত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতি

সেমিনারের সভাপতি ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, “মানবাধিকার মানে কেবল বিচার পাওয়া নয়, বরং এটি সমাজে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে দেশে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিশোধমূলক মানসিকতা বেশি কাজ করছে, যা ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।”

সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মতামত

সেমিনারের উদ্বোধন করেন এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এএলআরডি, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, রিব, স্পেস ফাউন্ডেশন, বাঙ্গালি সমগ্র জাদুঘর ও নিজেরা করির প্রতিনিধিরা। সেমিনারের আলোচনায় সবাই একমত প্রকাশ করেন যে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রুথ কমিশন একটি অপরিহার্য ব্যবস্থা হতে পারে। এটি শুধু বিচারপ্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক হবে।


বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ট্রানজিশনাল জাস্টিস ও ট্রুথ কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি কেবলমাত্র অতীতের অন্যায়ের বিচার করবে না, বরং সামনের পথকে ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। সরকার, মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ধরনের কমিশন গঠনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ