আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৪/০২/২০২৫ ০১:৪১পি এম
দেশের বিমানবন্দর উন্নয়নে লুটপাটের মহোৎসবের নেতৃত্বে হাবিবুর রহমান
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে উন্নয়নের নামে যে লুটপাটের মহোৎসব চলছে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতিত আমলে বিমানবন্দরগুলোর নানা প্রকল্পে শোষণ ও দুর্নীতি ঘটে, যার ফলে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এসব দুর্নীতির তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে, এবং দুদক এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে বলে জানিয়েছে।
বেবিচকের প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা অভিযুক্ত হয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক, এবং বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।
সাবেক সচিব মহিবুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জনেন্দ্রনাথ সরকারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তবে, হাবিবুর রহমান এখনও তার পদে বহাল রয়েছেন, যদিও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি বর্তমানে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী পদে আছেন, এবং তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান ও তার সহকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিমানবন্দর প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামেও দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। এসব প্রকল্পের টাকা চুরি ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদক তদন্ত করছে।
এদিকে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং তার উপর কঠোর নজরদারি চলছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার উপর কঠোর নজরদারি রেখেছে এবং যে কোনো মুহূর্তে তাকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া জানিয়েছেন, "মামলা হয়েছে, এখন তদন্ত হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" তবে অনেক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, "মামলা হওয়া মানে অপরাধী হওয়া নয়।"
এই দুঃখজনক দুর্নীতির ঘটনা দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের টাকাকে অপচয় করার একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রভাব আজও বহাল।
দুর্নীতির বিস্তারিত তদন্ত: বিমানবন্দর প্রকল্পের টাকা কোথায় গেল?
দুদক জানায়, তাদের তদন্তে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২১২ কোটি টাকা অবৈধভাবে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দর ও শাহ আমানত বিমানবন্দরের প্রকল্পগুলির মধ্যে মোট ৩,২৮০ কোটি টাকার লুটপাট হয়েছে।
বেবিচকের বিরুদ্ধে আরও একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতির ঘটনা তদন্তাধীন রয়েছে এবং দুদক জানিয়েছে যে, এর প্রমাণ পাওয়া গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৮টি বিমানবন্দরের ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে তদন্ত চলছে, এবং প্রায় ৯শ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, বেবিচক কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের মাঝেও এক কর্মকর্তা এখনও তার পদে বহাল, যা দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, কেন এই দুর্নীতি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
এ ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, আর তদন্তের মাধ্যমে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের বিমানবন্দর প্রকল্পের উন্নয়ন হুমকির মুখে পড়বে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।