আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২১/০১/২০২৫ ১০:২৬এ এম
ট্রাম্পের দ্বিতীয় ইনিংস: প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পরদিনেই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন স্থানীয় সময় সোমবার। শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শুরু করেছেন একাধিক চমকপ্রদ কার্যক্রম, যা ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি প্রায় ২০০টি নির্বাহী আদেশ জারির পরিকল্পনা করেছেন, যা নজিরবিহীন বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন।
অভিবাসন নিয়ে বিপ্লবী সিদ্ধান্ত
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। তার অভিবাসন নীতির প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের সীমানা সুরক্ষা আরও কঠোর করা। তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের দেড় শ বছরের পুরোনো সংবিধানিক অধিকার। “এটি হাস্যকর,” বলেছেন ট্রাম্প। তার মতে, এই নীতির পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।
এছাড়া, তিনি জাতীয় সীমান্ত সুরক্ষায় সামরিক বাহিনীর সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে স্কুল ও গির্জায় অভিযান পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন।
মেক্সিকো নীতির পুনর্বহাল
প্রথম মেয়াদে আলোচিত ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতিকে পুনরায় কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এই নীতির আওতায় আশ্রয়প্রার্থী প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল।
এছাড়া, তিনি ১৯৪৪ সালে প্রণীত ‘টাইটেল ৪২’ ব্যবস্থার অধীনে দক্ষিণ সীমান্ত বন্ধ করার পরিকল্পনা করছেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রোগ ঠেকানোর অজুহাতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেবে।
মাদক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা করেছেন। আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মতো সংগঠনের তালিকায় এই চক্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রাচীরটির কিছু অংশ নির্মিত হলেও, বড় একটি অংশ এখনো অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় মেয়াদে এই কাজ সম্পূর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
শুল্ক নীতিতে বড় পরিবর্তন
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এবার তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন। এই সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে নতুন দিগন্ত
ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে ছিলেন। তার শপথ গ্রহণের পরপরই বিটকয়েনের মূল্য ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন সরকারের জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের মতো একটি কৌশলগত ক্রিপ্টো মজুত গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
জলবায়ু নীতির বিরোধিতা
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেওয়া পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলোর বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্প। তিনি অফশোর এবং কেন্দ্রীয় ভূমিতে খননের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, নতুন বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্দেশনা বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন।
ট্রাম্পের এই সাহসী এবং চমকপ্রদ সিদ্ধান্তগুলো তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে এক ভিন্ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছে। তবে, তার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে কতটা সফল হবেন, সেটি দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী নজর থাকবে।