দলে ফেরার আকাঙ্ক্ষা, নির্বাচনী মাঠে জানে আলম খোকার প্রস্তুতি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বগুড়ার রাজনীতিতে ত্যাগী নেতাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুর-ধুনটের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে আলোচিত ও গ্রহণযোগ্য এক নাম— জানে আলম খোকা।
মরহুম গাজিউর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান খোকা ছাত্রদলের মাধ্যমে ১৯৮০-৮১ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। অল্প সময়েই সাংগঠনিক দক্ষতা, কর্মীদের প্রতি আন্তরিকতা ও জনগণের আস্থার জায়গা দখল করে নেন তিনি। দল গঠন, কর্মী ধরে রাখা এবং তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিলো অনন্য।
১৯৯১ সালে শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শেরপুর-ধুনটে তার জনপ্রিয়তা অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যায়। তখন প্রচলিত একটি কথা ছিল— “শেরপুরের বিএনপি মানেই খোকা, আর খোকা মানেই বিএনপি।” তার আহ্বানে হাজারো নেতাকর্মী মাঠে নেমে আসতেন। দুঃসময়ে তিনি যেমন ছিলেন সবার পাশে, তেমনি বিজয়ের সময়ও ছিলেন অগ্রভাগে।
২০০১ সালে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে শুরু করে ২০০৮ সালে বগুড়া-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়া— সর্বত্রই খোকা প্রমাণ করেছেন তিনি ভোটারদের আস্থার প্রতীক। পৌরসভা নির্বাচনে একাধিকবার জয়লাভও তার জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর বহন করে।
তবে রাজনৈতিক জীবনে বারবার বহিষ্কারের মুখোমুখি হয়েছেন খোকা। সর্বশেষ ২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বহিষ্কারের গ্লানি তার জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, খোকা দলে না ফিরলে শেরপুর-ধুনটে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও শেরপুর পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন— “জানে আলম খোকা শেরপুর-ধুনটে মাটি ও মানুষের সাথে মিশে গেছেন। বহু ত্যাগ শিকার করে আজ তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন।”
শেরপুর উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আবু সাঈদ বলেন— “খোকা ভাই আমাদের সাহসের প্রতীক। রাজনীতিক পরিবার থেকে উঠে আসা এই নেতাকে দলে ফিরিয়ে এনে মনোনয়ন দিলে বিএনপির সর্বোচ্চ অর্জন হবে এই আসনে।”
শেরপুর উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য হাসানুল মারুফ শিমুল বলেন— “খোকা ভাই নিঃসন্দেহে তৃণমূলের আস্থাভাজন নেতা। তার জনপ্রিয়তা অনেক নেতার চেয়ে আলাদা। এজন্যই ২০০৮ সালে তার আবেদনেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং তাকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছিল।”
যুবদল ও ছাত্রদলসহ তৃণমূল নেতাদের প্রত্যাশাও একই। তারা মনে করেন, দলে বিভাজন ভুলে খোকাকে ফিরিয়ে আনলে বিএনপি এই আসনে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
নিজের রাজনৈতিক যাত্রা ও বর্তমান অবস্থান প্রসঙ্গে জানে আলম খোকা বলেন— “গ্রুপ পলিটিক্স এবং হাইব্রিড নেতাদের কোন্দলের ফাঁদে ফেলা হয়েছে আমাকে। আমি দলের কাছে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আবেদন করেছি। আল্লাহ ভরসা।”
তিনি আরও বলেন— “আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে এসেছি। মৃত্যু পর্যন্ত বিএনপির একজন সক্রিয় সৈনিক হয়ে থাকতে চাই।”
শেরপুর-ধুনুটের সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল কর্মীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন— জানে আলম খোকাকে যদি দলে ফিরিয়ে আনা হয়, তবে তিনি শুধু বিএনপির ভোটব্যাংক পুনর্গঠিত করবেন না, বরং জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবেন।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তিনি। আর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দিন গুনছেন— কবে প্রিয় খোকা ভাই দলে ফিরবেন, হাতে তুলে নেবেন ধানের শীষ, আর শেরপুর-ধুনটের রাজনীতিতে নতুন আশার আলো জ্বালাবেন