শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২১/০২/২০২৫ ১০:৪৯এ এম

বাংলা ভাষার প্রেমে পড়া জার্মান তরুণ: বাংলাদেশে এসে আবিষ্কার করলেন নতুন জীবনধারা

বাংলা ভাষার প্রেমে পড়া জার্মান তরুণ: বাংলাদেশে এসে আবিষ্কার করলেন নতুন জীবনধারা
এক জার্মান তরুণের বাংলাদেশে আসার গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। কাজ শেখার জন্য তিনি বাগেরহাটের একটি কাঠের ঘর তৈরির কারখানায় কাজ করতে এসেছেন, কিন্তু তার যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলা ভাষা শেখার এক অনবদ্য অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। দিমিত্রি আক্রিটিডি, যিনি বেলজিয়ামের 'নোই বিল্ডার্স' নামের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের এই কারখানায় ইন্টার্নশিপ করছেন। তার লক্ষ্য শুধু কাঠের ঘর তৈরি শেখা নয়, বরং বাংলা ভাষা শিখে, বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে নিজেকে আরো গভীরভাবে পরিচিত করা।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসা দিমিত্রি তার অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে গিয়ে জানান, প্রথমবার গুগল ম্যাপে বাংলাদেশ দেখে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। সবুজে ভরা দেশ, সজীব পরিবেশ, এবং ঢাকা শহরের মানুষের বন্ধুসুলভ আচরণ তাকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে বাগেরহাটের গ্রামীণ পরিবেশ তাকে ভিন্ন এক অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, "এখানে এসে বাংলাদেশের প্রকৃতি, খাবার, এবং মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আমি নিজেকে একদম অন্যরকম অনুভব করছি।"

দিমিত্রির ভাষায়, "বাংলাদেশে এসে আমি শুধু নিজের ধারণাই বদলে ফেলিনি, বরং নতুন বন্ধু তৈরি করেছি, এবং সত্যিই ভালো লাগছে এখানে থাকাটা। আমি চাই অন্যরাও এখানে আসুক এবং এর অভিজ্ঞতা গ্রহণ করুক।" তিনি আরো যোগ করেন, "বাংলা ভাষা আমার কাছে খুবই মধুর মনে হয়েছে। আমি এখন বাংলা ভাষা শিখছি এবং নোটবুকে নানা শব্দ লিখে শিখে যাচ্ছি।"

দিমিত্রি আক্রিটিডি এরই মধ্যে বাংলা ভাষার বেশ কিছু বাক্য আয়ত্ত করেছেন। 'শুভ সকাল', 'শুভ দুপুর', 'আপনাকে ধন্যবাদ' ইত্যাদি বাংলা শব্দ তার মুখে শুনে সবাই অবাক। তিনি জানালেন, "বাংলা শেখার জন্য আমি খুবই আগ্রহী, কারণ ভাষার মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব।"

এই তরুণের অভিজ্ঞতার পেছনে রয়েছে 'ন্যাচারাল ফাইবার' কারখানার প্রধান মোস্তাফিজ আহমেদের সহায়তা। তিনি বলেন, "আমরা দিমিত্রিকে এখানে ইন্টার্নশিপ করতে পাঠিয়েছি, কারণ আমাদের কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়াগুলোর সাথে তার অভিজ্ঞতা যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। কাঠের বাড়ি তৈরির কাজ আমাদের জন্য নতুন, তবে আমরা আশা করি যে দিমিত্রি এখানে শিখে গ্রিস ও ঘানায় নতুন কারখানা চালু করতে সহায়তা করবে।"

দিমিত্রির দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার প্রতি অনুরাগী হয়ে মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, "এটা আমাদের জন্য বিশেষ গর্বের বিষয় যে, একজন ইউরোপীয় তরুণ এখানে এসে কাজ শিখছে। এতে আমাদের দেশের শিল্পকারখানার মান এবং প্রতিযোগিতামূলক সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে।"

দিমিত্রি আক্রিটিডি তার কাজের শুরুটা জার্মানিতে বাবার প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন এবং নিজস্ব ব্যবসাও শুরু করেছেন। বর্তমানে বেলজিয়ামের 'নোই বিল্ডার্স' এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাঠের বাড়ি এবং আসবাব তৈরি করে যাচ্ছেন। তার ভাষায়, "কাঠের ঘর তৈরির কাজ আমার একদম পছন্দ। কাঠ বিষমুক্ত সামগ্রী, তাই আমি মনে করি এটি পরিবেশবান্ধব এবং এটি নিয়ে কাজ করা আমার শখ ছিল।"

দিমিত্রির এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দৃষ্টিকোণ এনে দিয়েছে, যেখানে ভিনদেশি তরুণরা শুধুমাত্র কাজ শিখতেই নয়, আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ