আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২০/০২/২০২৫ ১১:১৬এ এম
ঢাকার রাজপথে অস্থিরতা: ছয় মাসে ১৮০টি আন্দোলন! রাজধানী কি জিম্মি বিশৃঙ্খলার?
ঢাকার রাজপথ যেন রীতিমতো আন্দোলনের জনপদে রূপ নিয়েছে। গত ছয় মাসে রাজধানীতে হয়েছে ১৮০টি আন্দোলন—একটি চমকপ্রদ ও উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন যেন প্রতিদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থী, শ্রমিক, পেশাজীবী সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই নিজেদের ন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন। এর ফলে রাজধানীর সড়কগুলোতে নিত্যদিনের যানজট এবং জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
আন্দোলনের ঢল: কোথাও থামছে না বিক্ষোভের আগুন
অটোরিকশা থেকে অটোপাস, আনসার থেকে পুলিশ, এমএলএসএস থেকে ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা—সবাই কোনো না কোনো দাবিতে আন্দোলনে নামছেন। এমনকি একই দিনে রাজধানীর ১৭টি জায়গায় একযোগে সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। দাবি কখনো চাকরি স্থায়ীকরণ, কখনো সরকারিকরণ বা বদলি নিয়োগ। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের টানা ৯ দিনের আন্দোলন রাজধানীজুড়ে তীব্র ভোগান্তি তৈরি করে।
শুধু তাই নয়, ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়াদের প্রতিবাদ, ৪০ ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইদের আন্দোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিক্ষোভ, বিডিআর সদস্যদের পরিবার এবং চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের বিক্ষোভও রাজপথ কাঁপিয়েছে। এমনকি রেল চলাচল বন্ধ করে দেয় রানিং স্টাফরা, চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতেও আন্দোলন হয়।
রাজপথে অচলাবস্থা: যানজটের নগরে পরিণত ঢাকা
আন্দোলনের উত্তাপে রাজধানীর যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। পুলিশেরও যেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে রোগী ও শিক্ষার্থীরাও পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। আন্দোলনকারীদের এই অনমনীয় অবস্থানে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী।
শুরু কোথায়? সমাধানই বা কোথায়?
গত বছরের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সরকার একের পর এক দাবি মেনে নিতে শুরু করে, যা আরও আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “এই সরকার দাবি পূরণ করতে করতে আন্দোলনকারীদের আরও উৎসাহিত করেছে। সরকার শুরুতেই যদি শক্ত অবস্থান নিত, তবে পরিস্থিতি এভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেত না।”
শিক্ষা থেকে আইনশৃঙ্খলা—সবখানেই উত্তেজনা
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল প্রকাশের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেমন হয়েছে, তেমনি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। পরীক্ষায় যারা পাস করতে পারেননি, তারাও ফল বাতিলের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলন—এসবই ঢাকা শহরের অচলাবস্থাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কবে শেষ হবে এই অস্থিরতা?
ঢাকার রাজপথে এই টানা আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। রাজধানীর নাগরিকরা জানতে চান, কবে শেষ হবে এই অস্থিরতা? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতাকে অনেকে এ বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন। তবে সরকার কি এখনো কঠোর অবস্থান নিতে প্রস্তুত? নাকি আন্দোলনের ঢেউয়ে আরও ভাসতে হবে ঢাকাবাসীকে?
আপনার মতামত কী? ঢাকার আন্দোলন কি ন্যায্য দাবি পূরণের মাধ্যম, নাকি অস্থিরতার নতুন নাম?