আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১৩/০২/২০২৫ ০৭:৪০পি এম
চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধান: আয়নাঘর ঘুরে যা জানালেন সাংবাদিক তাসনিম খলিল!
ঢাকার কচুক্ষেত, উত্তরা ও আগারগাঁওয়ে অবস্থিত কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) আয়োজিত এই সফরে নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিলও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তিনি ২০২২ সালে নেত্র নিউজে প্রকাশিত বহুল আলোচিত প্রতিবেদন "আয়নাঘরের বন্দী"-র সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভেরিফিকেশন করেন। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে "আয়নাঘরে যা দেখলাম" শিরোনামে একটি পোস্ট দেন, যেখানে তিনি এই বন্দিশালার গোপন চিত্র তুলে ধরেন।
আয়নাঘর: গোপন বন্দিশালার ভয়ংকর বাস্তবতা
তাসনিম খলিল লিখেছেন, বাংলাদেশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই পরিচালিত এই গোপন বন্দিশালা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (JIC) নামে পরিচিত। যার ছদ্মনাম "আয়নাঘর"। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে গোপনে আটক রাখা হতো এবং বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন চালানো হতো।
তিনি জানান, আয়নাঘরের গেট দিয়ে প্রবেশের পর করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটি রুমে ঢোকেন, যেখানে অনেকগুলো কাঠের দরজা ও লোহার শিকের দরজা পড়ে ছিল। সেখানেই এক সেনা কর্মকর্তা তাকে বলেন, "আপনি কী খুঁজছেন আমি জানি। বড় এগজস্ট ফ্যানগুলো খুঁজছেন তো? আসেন আমি দেখাচ্ছি।"
এরপর তিনি সরু করিডোর পার হয়ে একদম সামনে যান এবং এক বিশাল ফ্যান দেখতে পান। ফ্যান দেখতে দেখতেই তার নজর পড়ে বাম পাশে, যেখানে "১৯ নম্বর সেল" লেখা দরজা ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তার ফোন বের করেন এবং একজন সাবেক বন্দি মোবাশ্বের হাসানকে ভিডিও কল দেন।
মোবাশ্বেরের চোখে চেনা সেই নির্যাতনকেন্দ্র!
মোবাশ্বের হাসান, যিনি একসময় এই আয়নাঘরের বন্দি ছিলেন, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। ভিডিও কলে তাসনিম খলিল তাকে দেখান সেই সেল যেখানে তিনি ছিলেন। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর চমকে গিয়ে বলেন, "এইটাই তো মনে হইতেছে ম্যান!"
তাসনিম খলিল জানান, বন্দিশালার সাবেক বন্দিরা বিভিন্ন সময় আয়নাঘরের যে বিবরণ দিয়েছেন, তার সাথে现场 পরিদর্শনের সময় পাওয়া অনেক তথ্যের মিল পেয়েছেন।
"এই নাম প্রথম শুনেছিলাম আপনার কাছ থেকেই!"
আয়নাঘর পরিদর্শনের সময় হঠাৎ করেই এক ব্যক্তি এসে বলেন, "তাসনিম ভাই, এই আয়নাঘরের নামটা কিন্তু আমরা আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম!" ওই ব্যক্তি নিজেকে একসময় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন বলে দাবি করেন এবং জানান, এই বন্দিশালার বাস্তবতাগুলো সাংবাদিকদের প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গোপন বন্দিশালা ও নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন
তাসনিম খলিলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আয়নাঘরের দেয়ালে আঁচড়ের দাগ, ঘুলঘুলি দিয়ে বাইরে দেখা কাঁঠাল গাছ, কলাপসিবল গেট, ছোট ছোট নির্জন কক্ষ এবং নির্যাতনের নানা চিহ্ন। তিনি বলেন, "প্রতিটি দেয়াল যেন সাক্ষী হাজারো বন্দির আর্তনাদের।"
প্রকাশ্যে আসছে গোপন সত্য!
এই পরিদর্শনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের গোপন আয়নাঘরের অজানা তথ্যগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বন্দিশালা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং আন্তর্জাতিক মহল এই বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেখায়।