আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৭/০১/২০২৫ ০১:২৩এ এম
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: শিবির সভাপতির আহ্বান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। গত রাতে (২৬ জানুয়ারি) নীলক্ষেত মোড় এবং মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুটি পক্ষ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং এলাকাজুড়ে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ সংঘাত এড়াতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই সাত কলেজ সংক্রান্ত বিষয় সমাধান করতে দিন। সংঘাত কেবল পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “অন্তর্নিহিত স্বৈরাচারী শক্তি এই ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়, কিন্তু আমরা যেন তাদের সেই সুযোগ না দিই।”
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের দিকে অবস্থান নিতে শুরু করেন। অপরদিকে, ঢাবি শিক্ষার্থীরা স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে লাঠি হাতে অবস্থান নেন। এই অবস্থানের কিছু সময়ের মধ্যেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ইটপাটকেল ছোঁড়াছুড়ি শুরু হয়। এরপর দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও উত্তেজনা কমানো সম্ভব হলেও পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল হয়নি।
শিক্ষার্থীদের দাবি: স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা এবং প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ঘটনাটি মূলত শুরু হয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং ঢাবির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। এর আগে ঢাবি শিক্ষার্থীরা প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করার জন্য এক ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তাদের দাবির মধ্যে ছিল প্রো-ভিসির অসদাচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সাত কলেজের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে, প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর, ঢাবি শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে তারা প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করবে। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল রহমান এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না যতদিন না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়।”
পুলিশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
উত্তেজনাপূর্ণ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকায় উপস্থিত আছেন। তবে, সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের উপস্থিতি ও তাদের পদক্ষেপ যেন আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হয়, এই বিষয়ে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন। তাদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সংঘর্ষের পরিমাণ কমানো সম্ভব হতে পারে।
এদিকে, এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঢাবি ও সাত কলেজের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা এবং ছাত্রদের মাঝে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার আরও একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার পর, অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে যদি দ্রুত সমস্যার সমাধান না হয়, তবে পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ঢাবি এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রশাসন এবং ছাত্র সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে আরও আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে, যদি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সমাধান না হয়, তাহলে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এখন দেখার বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের এই দাবি কীভাবে প্রশাসন গ্রহণ করে এবং পরিস্থিতি কীভাবে শান্ত হয়। তবে, এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও যে একটি বড় ভূমিকা রাখছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।