আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৯/০১/২০২৫ ০৭:৩২পি এম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির সম্মেলন বাতিলের দাবিতে উত্তাল বিক্ষোভ, জুতামিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। মশাল ও ঝাড়ুমিছিলের পর এবার জুতামিছিলের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা কবির আহমেদ ভূঁইয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
প্রতিদিন চলবে আন্দোলন
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা শহরে জুতা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জেলা বিএনপির সম্মেলন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন আন্দোলন চলবে।
এর আগে, গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি দুই দফায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করলেও তীব্র বিরোধিতার কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপি তারিখ পরিবর্তন করে। সর্বশেষ, ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই তারিখ বাতিলের দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে দলের একাংশ।
বিএনপির ভেতর দ্বন্দ্ব চরমে
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি ও নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদিকে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক। অন্যদিকে, আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আরেকটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। দুই বছর ধরে এ দুই পক্ষ আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছে।
জুতামিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের পাওয়ার হাউস রোড এলাকা থেকে হাতে জুতা নিয়ে মিছিল বের করেন বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। তারা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টেংকেরপাড় এলাকায় গিয়ে সমাবেশে রূপ নেয়।
সমাবেশ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা কবির আহমেদের নামে তৈরি একটি কুশপুত্তলিকা জুতাপেটা করেন এবং পরে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন সিনিয়র নেতারা
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মঈনুল হোসেন। বক্তব্য দেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা, যাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনিসুর রহমান, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা ও সাবেক আহ্বায়ক মনির হোসেন।
'বেআইনি সম্মেলন হতে দেব না' - হুঁশিয়ারি আন্দোলনকারীদের
সমাবেশে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারির সম্মেলন অবৈধ। প্রকৃত বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। যদি কেন্দ্রীয় বিএনপি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শান্ত দেখতে চায়, তাহলে এই আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করতে হবে এবং নতুনভাবে প্রতিটি থানায় কমিটি গঠন করে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। এর আগে কোনো সম্মেলন করতে দেওয়া হবে না।’
কর্মসূচির ঘোষণা
মঈনুল হোসেন জানান, আগামীকাল বুধবার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও মহল্লায় আন্দোলন জোরদার করা হবে, যাতে সম্মেলনের পক্ষে কেউ মিছিল না করতে পারে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি থাকবে। বৃহস্পতিবার বড় পরিসরে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।
নেতৃত্বের সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, জেলা বিএনপির চলমান বিভক্তি এবং সম্মেলন নিয়ে দ্বন্দ্ব ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে, যা বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।