বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৯/০১/২০২৫ ১২:১৯পি এম

জুলাই ঘোষণাপত্র' নিয়ে আসছে বিএনপির নতুন প্রস্তাব! দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত করতে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি

জুলাই ঘোষণাপত্র' নিয়ে আসছে বিএনপির নতুন প্রস্তাব! দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত করতে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি
রাজনীতির মাঠে নতুন উত্তাপ ছড়াতে যাচ্ছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ইস্যু। বিএনপি শিগগিরই এ বিষয়ে তাদের দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করতে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দলটি নিজেদের কৌশল নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে।

দলীয় পর্যায়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি ছাত্রদের ঘোষণাপত্র খসড়া নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে। বিএনপি চায়, এই ঘোষণাপত্রকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে তার সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি সুসংহত করা হোক।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঘোষণাপত্রের বিষয়টি নিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে সিনিয়র নেতাদের একটি দল ঘোষণাপত্রটি প্রণয়নে কাজ করছে। বিএনপি মনে করে, এটি কেবলমাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফল নয়, বরং বিগত বছরগুলোর গণতান্ত্রিক লড়াই এবং ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবেও গুরুত্ব পাবে।

শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ও ঐকমত্যের চেষ্টা

বিএনপির পাশাপাশি, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আলোচনা করবে বিএনপি। এর মাধ্যমে দলটি চাইছে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে, যাতে ঘোষণাপত্রটি রাজনৈতিকভাবে আরও গ্রহণযোগ্য হয়।

এদিকে ৫ আগস্টের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারেও বিএনপি নিজেদের আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপির মতে, এটি শুধুমাত্র একটি ‘ডিক্লারেশন’ হওয়া উচিত এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তা চূড়ান্ত করা দরকার।

বিএনপির ঐতিহাসিক অবস্থান ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্ন

বিএনপি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধই বাংলাদেশের ভিত্তি। ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের প্রসঙ্গ নিয়ে ছাত্রদের অবস্থানকে দলটি ‘অযৌক্তিক’ মনে করছে। বিএনপির মতে, একাত্তরের ইতিহাসকে বিকৃত না করে, বরং সামগ্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনার ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র তৈরি করা উচিত। দলটি স্পষ্ট করেছে যে, তারা কোনো ইতিহাস মুছে ফেলতে চায় না, বরং বাস্তব ঘটনার আলোকে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে চায়।

বিএনপি নেতাদের মতামত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অতীতে ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি কোনো ইতিহাস বিকৃতি চায় না, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রকৃত সত্য সামনে আনতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেই শেখ হাসিনার পতন হয়নি। বরং বিগত বছরগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক নেতা-কর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। তাই এই ঘোষণাপত্রে তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি থাকা উচিত।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘ছাত্রদের ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার পক্ষে আমরা নই। বরং এটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, এটির আইনি ও সাংবিধানিক দিক নিয়েও আমরা ভাবছি।’

বিএনপির শরিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গুম-খুন, হত্যা, নির্যাতন, জেল-জুলুমের বিষয়গুলো ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত করা উচিত। আমরা আমাদের খসড়া তৈরি করেছি এবং বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করছি।’

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন কেবল ৩৬ দিনের আন্দোলনে হয়নি। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ভিত্তিতেই এটি এসেছে। আমাদের বক্তব্য হলো, ঘোষণাপত্রে সকলের ভূমিকা স্বচ্ছভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।’

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাজনীতি

সব মিলিয়ে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির নতুন অবস্থান স্পষ্ট হতে যাচ্ছে। ছাত্রদের খসড়ার সংশোধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় এবং সাংবিধানিক বৈধতার বিষয় মাথায় রেখে দলটি এগোচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত হলে, তা রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ