বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৩/০১/২০২৫ ০৪:১৮পি এম

১৬ বছরের বন্দিজীবনের অবসান: কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ১২৬ বিডিআর সদস্য

১৬ বছরের বন্দিজীবনের অবসান: কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ১২৬ বিডিআর সদস্য
২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৬ বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার ভোরে ১২৬ জন বিডিআর সদস্যের মুক্তির আদেশ কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

কারাগার থেকে মুক্তির পরিসংখ্যান
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১: ২৪ জন
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২: ৮৯ জন
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার: ১৩ জন
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) কিছু সদস্য কথিত বিদ্রোহের নামে পিলখানায় তাণ্ডব চালায়। এই নারকীয় ঘটনার শিকার হন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন।

দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনে সেনা আইনে বিচার করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচলিত আইনে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতি
এই ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়:

হত্যা মামলা:
বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর।

রায়: ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, এবং ২৭৮ জনের খালাস।

আপিলের রায় ঘোষণা হয় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর।
বিস্ফোরক মামলা:
৮৩৪ জন আসামি।
রাষ্ট্রপক্ষ হত্যার মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করলেও বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি।

মামলাটি দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর অবশেষে বিচারকাজ শেষ হয়।

মুক্তি পাওয়া বিডিআর সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

কারাগার থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া হাবিলদার সোলায়মান ও শহীদুল ইসলাম বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অবশেষে মুক্তি পেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী ছিল না, তবুও আমাকে ১৬ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। এখন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সরকারি চাকরির সকল সুযোগ-সুবিধা যেন আমাদের প্রদান করা হয় এবং চাকরির মেয়াদ থাকা সদস্যরা যেন পুনরায় কাজে যোগ দিতে পারেন।”

বিস্ফোরক মামলার বিলম্বের কারণ

বিস্ফোরক মামলার বিচারে দীর্ঘ সময় লেগেছে মূলত রাষ্ট্রপক্ষের কার্যক্রমে বিলম্ব এবং মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন না করার কারণে। তবে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিচারকাজ শেষ হওয়ায় কারাবন্দিরা আজ মুক্তি পেয়েছেন।

শেষ কথা
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ১২৬ বিডিআর সদস্যের জীবনে নতুন সূচনা হলো। তাদের এই মুক্তি শুধু আইনি লড়াইয়ের একটি পর্বের সমাপ্তি নয়, বরং দীর্ঘ ১৬ বছরের বন্দিজীবনেরও অবসান। এখন দেখার বিষয়, তাদের পুনর্বাসন এবং সরকারি চাকরিতে পুনঃস্থাপনের দাবিগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ