কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
কুতুবদিয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, নভেম্বরে আক্রান্ত দুই শতাধিক
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুতুবদিয়া
কুতুবদিয়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে—গত দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৮–১২ জন রোগী ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ না হলে তাদের বাসায় থেকেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কুতুবদিয়া হাসপাতালে ওষুধ, স্যালাইন ও পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল হাসান। তিনি বলেন, “দ্বীপাঞ্চলে আগে এ ধরনের প্রকোপ ছিল না। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। এখনই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার না হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।” তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে বলে জানান তিনি। এসময় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন ডাঃ রেজাউল হাসান।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, শুধু নভেম্বর মাসেই আধুনিক হাসপাতালে ১০০ জনেরও বেশি রোগীর ডেঙ্গু পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যের মধ্যে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি—সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। এছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতেও কম বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তথ্য থেকে জানা গেছে, গত এক মাসে কয়েক শতাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মারুফ জানান, ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং প্লেটলেট কমে যাওয়ার সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, “হাসপাতালের ধারণক্ষমতার তুলনায় রোগীর চাপ বেশি। প্রাচীন ৩০ শয্যার ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ায় সব বয়সের রোগীদের একই স্থানে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
এদিকে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতেও রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পরিচ্ছন্নতা উদ্যোগ ও মশক নিধন কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। নিয়মিত ফগিং না হওয়ায় মশার বিস্তার দ্রুত বাড়ছে। এছাড়া যত্রতত্র ময়লার স্তূপের কারণে দুর্গন্ধ ছড়ানো ও রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটির সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরাও একই মত প্রকাশ করে বলেছেন—এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
কুতুবদিয়াবাসীর প্রত্যাশা—অবিলম্বে কার্যকর মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
