ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
বনে ফিরেছে হাতি, দাবী বনবিভাগের
(আনোয়ারা-কর্ণফুলী)
থেমে নেই হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব। বিপাকে দেয়াঙ পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতির পালের তান্ডবে অতিষ্ঠ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী দুই উপজেলার গ্রামবাসী। গত ৭ বছর ধরে বন্যহাতির তান্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঔই এলাকার বাসিন্দরা। তবে রোববার ভোরে হাতি গুলো নিজেই বাঁশখালীর বনে ফিরে গেছেন বলে দাবী করেছেন বনবিভাগ স্থানীয় এলাকাবাসীর। হাতির আক্রমণে প্রতিরাতে কোথাও না কোথাও ভাঙচুর ও আহতের ঘটনা ঘটছেই। বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান আনোয়ারা-কর্ণফুলীর কেইপিজেড আশেপাশের বাসিন্দারা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকে বনবিভাগ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং হাতি নিরসনে বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাতি চলে যাওয়ার বিভিন্ন ভিডিও প্রচার করে। প্রায় ৭ বছরপর একসঙ্গে তিনটি হাতি চলে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরছে স্থানীয়দের মাঝে। এদিকে হাতিগুলো যাতে সহজে ফিরতে না পারে সেজন্য ইআরটি টিমের সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ।
বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, ‘গত দুই-একদিন আগে দুইটি হাতি বাঁশখালীতে চলে আসে। বাকি একটি হাতিকে আমাদের ইআরটি টিম কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন কৌশলে রোববার ভোরে দিকে তৈলারদ্বীপ হয়ে বাঁশখালী বনে নিয়ে আসে। হাতি ফিরে আসতে চাইলে কারও আটকানোর সাধ্য নেই। তবে হাতিগুলো যাতে খুব সহজেই ফিরে আসতে না পারে সেজন্য তৈলারদ্বীপ সেতু এলাকায় ইআরটি টিমের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েকদিন আগে দুটি হাতি কেইপিজেড থেকে বাঁশখালীর বনে চলে যায়; যেখান থেকে হাতিগুলো এসেছিলো। আর একটি হাতি ছিলো; সেটিকে বনবিভাগের ইআরটি টিমের প্রচেষ্টায় বাঁশখালীর বনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিগত এক যুগ আগে থেকে বন্যহাতির দল কেইপিজেডের পাহাড়ে অবস্থান নেন। সেই সময় কয়েকদিন ঘুরে ফিরে চলে গেলেও ২০১৮ সাল থেকে হাতিগুলো কেইপিজেড, দেয়াং পাহাড়ে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে। হাতির আক্রমণে ৭ বছরে নারী-শিশুসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হাতির পালটি আনোয়ারার বটতলী হাজীগাঁও ও কর্ণফুলীর কেইপিজেডের দেয়াঙ পাহাড়, হৃদ ও বন ঘেরা জায়গায় বিচরণ। তাদের হামলায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। বিভিন্ন সময়ে গভীর রাতেও টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত অ্যাপ্রোচ রোডের পশ্চিম বৈরাগ অংশ পার হতে দেখা যায় তিনটি হাতি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ওই হাতির দলটি স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাতির আক্রমণে ওই এলাকায় মানুষের প্রথম মৃত্যু হয়। শুরুতে এই দলে দুটি বড় এবং একটি ছোট হাতি ছিল। মাঝে মাঝে আরো একটি বড় আকারের হাতিকে এ দলের সাথে দেখা যায়। স্থানীয়দের কাছে সেটি ‘লেজ কাটা’ হাতি নামে পরিচিত। এই হাতির দলের তান্ডবে তারা সবসময় আতঙ্কে থাকেন কর্ণফুলীর বড়উঠান ও আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের মানুষরা।
এদিকে হাতির বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় একশতের বেশি জিডি-অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন।
ইআরটি টিম লিডার এইচএম হাশেম বলেন, ‘পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া তিনটি হাতির মধ্যে দুইটি কয়েকদিন আগে এবং অপরটি রোববার ভোরে তৈলারদ্বীপ সেতু হয়ে বাঁশখালীর দিকে চলে যায়। হাতি গুলোর পিছনে আমাদের ইআরটি টিমের সদস্যরা ছিলেন। হাতির পায়ের চিহ্নিত করে সদস্যরা হেঁটে গিয়েও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।’