আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১৪/০২/২০২৫ ১১:৫৫এ এম
হাসিনার বিচার না হলে জনগণ ক্ষমা করবে না: অধ্যাপক ইউনূস
বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে অংশগ্রহণ করার সময়, সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার না করতে পারলে আমরা জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না।”
অধ্যাপক ইউনূস তার সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার সরকারের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, “এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, যদি আমরা জনগণের আস্থার যোগ্য হতে চাই।”
এ প্রসঙ্গে, তিনি উল্লেখ করেন যে ইতিমধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং তারা আশা করছেন এই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে, যাতে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা আইনের আওতায় আসতে পারেন। তিনি আরও বলেন, "আমরা ভারতকে জানিয়ে দিয়েছি, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, কারণ আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে।"
আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা আইনি প্রক্রিয়া চলমান রেখেছি এবং আশা করছি আমরা সফল হব। বিচার করা না হলে জনগণ আমাদের ক্ষমা করবে না।” তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তিনি একে জনস্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
এছাড়া, ইউনূস আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য আশাবাদী। তিনি জানান, দেশে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য ১৫টি কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং সেগুলোর প্রতিবেদন ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, এই কমিশনের সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হবে, যেখান থেকে রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজের মতামত নেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংস্কার কার্যক্রম ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
অধ্যাপক ইউনূস জানান, “আমরা রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে যাচ্ছি, যাতে আমরা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি। এর ভিত্তিতে নির্বাচন হবে, তবে কিছু সংস্কারের জন্য আরও সময় লাগতে পারে, যা আগামী বছরের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে।”
তিনি বলেন, "এই সরকার আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকবে এবং সেই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ১৬ বছর পর একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও কার্যকর নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাই।"
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, তার দায়িত্ব যখন শেষ হবে, তখন তিনি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি বলেন, “এটাই আমার দায়িত্ব, এবং যখন সেটি শেষ হবে, আমি সুখে থাকব।”
একটি ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা
অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, তাঁর সরকার এখন একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করছে, যেখানে দেশের সব পক্ষের মতামত এবং সুপারিশগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, ঐকমত্যের মাধ্যমে দেশের সবার স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবে, এবং তার নেতৃত্বে দেশে একটি স্থিতিশীল ও কার্যকর নির্বাচন হবে।
এখনকার সময়ে, বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে অধ্যাপক ইউনূসের এই বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার এই কঠোর পদক্ষেপ দেশবাসীর মনে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি করেছে, তবে তা সত্ত্বেও তিনি তার অবস্থানে অবিচল রয়েছেন।