রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
Verified আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৮/০২/২০২৫ ০৮:০৪পি এম

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর: ইতিহাসের প্রতীক এখন ভাঙারি ব্যবসায়ীদের দখলে

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর: ইতিহাসের প্রতীক এখন ভাঙারি ব্যবসায়ীদের দখলে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি এখন ভাঙারি ব্যবসায়ীদের দখলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি, যা একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, তা এখন লোহা, আসবাবপত্র এবং বইয়ের টুকরোর স্তূপে পরিণত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর এই বাড়িটি ভেঙে ফেলার ঘটনাটি যেন বাংলাদেশের রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হাজারো বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে এক বিশাল বিক্ষোভের আয়োজন করে। তাদের ক্ষোভের লক্ষ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার উত্তরসূরি শেখ হাসিনা, যাদের শাসনকে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিক্ষোভকারীরা বাড়ির জানালা, দরজা, এবং গ্রিল ভেঙে ফেলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ধ্বংস করে দেয়। এমনকি বাড়ির বিভিন্ন অংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যা পুরো এলাকাকে এক ভয়াবহ চিত্রে পরিণত করে।

বিক্ষোভের পরপরই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে ভাঙারি ব্যবসায়ীরা এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। তারা রিকশা এবং অটোরিকশা নিয়ে এসে বাড়ির অবকাঠামো থেকে লোহার বিভিন্ন অংশ খুলে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাড়ির পেছনের পাঁচতলা ভবন থেকে বই এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', 'কারাগারের রোজনামচা' সহ অনেক মূল্যবান দলিলও রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই ভাঙচুরকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, এই বাড়ি ছিল শোষণ ও স্বৈরাচারের প্রতীক। অনেকেই বলছেন, তারা এই জিনিসপত্র স্মৃতি হিসেবে সংগ্রহ করছেন, যা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহের প্রতীক। কেউ কেউ আবার বলছেন, এই বাড়ির ধ্বংস তাদের জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। বাড়ির প্রাঙ্গণে থাকা নারিকেল গাছের ফলও স্থানীয়রা সংগ্রহ করছে, যেন এটি ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করা যায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এই বাড়ি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ এই বাড়িকে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। তবে বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, জনগণের কাছে এই বাড়ি এখন আর ইতিহাসের গৌরবময় প্রতীক নয় বরং শোষণ ও দুঃশাসনের প্রতীক।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির এই ধ্বংসাবশেষ শুধু একটি স্থাপনার পতন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে যে, দেশের জনগণ আর শাসকগোষ্ঠীর প্রতারণা ও শোষণ মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মোড় পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে থেকে যাবে।

বাংলাদেশের জনগণ তাদের ইতিহাসের এই অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি নতুন, স্বাধীন, এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাবে—এটাই এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ