বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৩/০২/২০২৫ ১১:৪৭এ এম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: চার জোটের লড়াইয়ে জমে উঠেছে রাজনৈতিক ময়দান

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: চার জোটের লড়াইয়ে জমে উঠেছে রাজনৈতিক ময়দান
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল তোড়জোড়। চারটি প্রধান রাজনৈতিক জোট এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নির্বাচন সামনে রেখে চলছে আসন ভাগাভাগির সমীকরণ, কৌশলগত আলোচনা ও জোট সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা। বিএনপি তার সমমনা দলগুলোর জন্য বেশ কয়েকটি আসন ছেড়ে দিয়েছে, অন্যদিকে ইসলামি দলগুলোর সমর্থন পেতে বিএনপি ও জামায়াত সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

চারটি প্রধান জোটের প্রস্তুতি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চারটি প্রধান রাজনৈতিক জোটের মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন স্পষ্ট। প্রথমত, বিএনপি তার সমমনা দল নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। দ্বিতীয়ত, জামায়াতে ইসলামী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্বাচনি জোটের ঘোষণা দেয়নি, তবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ অন্য ইসলামি দলগুলো একটি বৃহত্তর ইসলামি শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তৃতীয়ত, গণতন্ত্র মঞ্চ জোট সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে, এবং চতুর্থত, বাম গণতান্ত্রিক জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান

এদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মাসেই নতুন দলটির নাম এবং আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে নতুন এই দলটি সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে, নাকি কোনো জোটের সঙ্গে যুক্ত হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাজনৈতিক নেতাদের মতামত

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, "ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের আন্দোলনে যে দলগুলো রাজপথে ছিল, তাদের নিয়েই আমরা নির্বাচন এবং পরবর্তীতে জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছি। এজন্য আমরা দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠক করছি।"

গণতন্ত্র মঞ্চ সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, "নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কাজ করছি। জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে আমরা জোট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।"

বাম গণতান্ত্রিক জোট প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত বলয়ের বাইরে একটি বামপন্থি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ইতিবাচক ও দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে একত্রিত করতে আমরা কাজ করছি এবং আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে।"

ইসলামি দলগুলোর কৌশল

ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনি কৌশল নিয়েও আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, "আমাদের আন্দোলনের সময় বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমরা ফ্যাসিজম ও জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে চাই। কার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট হবে বা সমঝোতা হবে, তা রোডম্যাপ ঘোষণার পর পরিষ্কার হবে।"

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জানান, "আমরা ইসলামি দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য চাই। ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষিত হলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

শেষ কথা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। চারটি প্রধান জোটের রাজনৈতিক চালচিত্র বদলাতে পারে দেশের নির্বাচনি লড়াইয়ের গতিপথ। সামনে জোটগুলোর চূড়ান্ত কৌশল এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ কী হবে, তা এখন সবার নজরে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ