আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৪/০২/২০২৫ ১২:২৯পি এম
সকালের ব্যায়াম বনাম সন্ধ্যার ব্যায়াম: কোন সময়টি স্বাস্থ্যকর?
আজকাল শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। ব্যায়াম একদিকে যেমন শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু একটি প্রশ্ন প্রায়ই সামনে আসে—সকালে ব্যায়াম করা ভালো, না সন্ধ্যায়? বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এবং গবেষণার মাধ্যমে এ বিষয়ে নানা মতামত দিয়েছেন। তবে, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর নির্ভর করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, শারীরিক অবস্থান এবং সময়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর। এই আর্টিকেলে আমরা এই দুটি সময়ের মধ্যে পার্থক্য, উপকারিতা, এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ তুলে ধরবো, যাতে পাঠকরা নিজেদের জন্য উপযুক্ত সময়টি নির্বাচন করতে পারেন।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্য:
শারীরিক কার্যকলাপের ইতিহাস খুব পুরনো। প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ প্রকৃতির সাথে মিশে শারীরিকভাবে সক্রিয় ছিল। তবে, আধুনিক যুগে ব্যায়ামের সময়ের বিষয়ে অনেক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে যেমন ‘অথলেটিক’ বা ‘অথলেটিক ট্রেনিং’ এর গুরুত্ব ছিল, তেমনি রোমান যুগে ‘ক্রোকাস’ বা সকালের ব্যায়ামের গুরুত্ব দেওয়া হতো। তাছাড়া, ভারতীয় যোগ এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনও প্রাচীনকাল থেকে সকালে করা হতো। তবে আজকের যুগে বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন গবেষণা ও ফলাফল প্রকাশ করেছেন যা আমাদের ব্যায়ামের সঠিক সময় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
সকালে ব্যায়ামের উপকারিতা:
সকালে ব্যায়াম করার অনেক সুবিধা রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের প্রতি সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক:
১. শক্তি এবং উদ্যম বৃদ্ধি:
সকালে ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর দ্রুত ফিট হতে শুরু করে। একটি ঘুমন্ত অবস্থায় শরীর দীর্ঘ সময় বিশ্রাম নেয়, এবং সকালে ব্যায়াম করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং আমাদের শরীর দ্রুত সচল হয়ে ওঠে। এই সময় শরীর থেকে ‘এন্ডোরফিন’ (Endorphin) নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং দিনের বাকি অংশে ভালো অনুভূতি দেয়।
২. মনোযোগ এবং মনস্তাত্ত্বিক স্থিতি:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালে ব্যায়াম করার ফলে মনোযোগ ও দৃষ্টি কেন্দ্রীকরণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে পুষ্টি সরবরাহ বেশি হতে থাকে, যা মানসিক চাপ কমাতে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. শরীরের অভ্যন্তরীণ জৈবিক ক্লককে সঠিকভাবে সমন্বিত করা:
সকালে ব্যায়াম করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্লক বা ‘সার্কেডিয়ান রিদম’ (Circadian Rhythm) আরও সঠিকভাবে কাজ করে। সকালে শরীরের ঘড়ি সঠিকভাবে সচল হলে সারা দিনের জন্য এনার্জি লেভেল স্থিতিশীল থাকে।
৪. ঘুমের উন্নতি:
সকালে ব্যায়াম করার ফলে রাতে ভালো ঘুমের সম্ভাবনা বাড়ে। আমাদের শরীর সকালে ব্যায়াম করলে রাতের সময় আরও কার্যকরভাবে বিশ্রাম নেয়, যার ফলে রাত্রিকালীন ঘুম গভীর হয়।
সন্ধ্যায় ব্যায়ামের উপকারিতা:
তবে, সন্ধ্যাবেলা ব্যায়াম করাও অনেকের জন্য আরামদায়ক এবং উপকারী হতে পারে। চলুন, সন্ধ্যাবেলায় ব্যায়াম করার কিছু সুবিধা দেখে নেওয়া যাক:
১. শরীরের তাপমাত্রা এবং শক্তির স্তর বৃদ্ধি:
সন্ধ্যার দিকে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা একটু বাড়তে শুরু করে এবং শক্তির স্তরও বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর আরও কার্যকরভাবে ব্যায়াম করতে পারে। এই সময়ে আমাদের মাংসপেশী এবং যৌগিক জয়েন্টগুলোও বেশি নমনীয় হয়, ফলে ব্যায়াম করার সময় কম ঝুঁকি থাকে।
২. স্ট্রেস মুক্তি:
দ্বিতীয় পর্বে ব্যায়াম করলে দিনের সমস্ত কাজের চাপ এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাজের চাপ কাটানোর জন্য সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা খুবই কার্যকরী। দিনের শেষের দিকে শরীর এবং মনকে সতেজ করা একটি বিরতি হিসেবে কাজ করে।
৩. উপযুক্ত সময়:
অনেক মানুষই সন্ধ্যা ৬ থেকে ৮টার মধ্যে ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন, কারণ এই সময়ে তারা অফিস বা অন্যান্য কাজের দায়িত্ব শেষ করে, এবং একটি স্থির সময় পেয়ে থাকেন। ফলে এটি তাদের জন্য সহজ হয়ে ওঠে ব্যায়াম করার জন্য একান্ত সময় বের করা।
৪. সার্বিক শারীরিক সুবিধা:
বিভিন্ন গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্ধ্যায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, তাই সন্ধ্যাবেলায় ব্যায়াম করলে মাংসপেশী আরও শক্তিশালী হতে পারে। এছাড়া সন্ধ্যাবেলায় ব্যায়াম করলে অনেকের ক্ষেত্রে শরীরের টোনিংও ভালো হয়।
বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বিশ্বের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সকালে এবং সন্ধ্যাবেলায় ব্যায়ামের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং তাদের মতামতও ভিন্ন। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, সকালে ব্যায়াম করলে শরীর এবং মনের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। তারা বলছেন, সকালবেলা ব্যায়াম করা শরীরের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে দেয় এবং দিনের বাকি অংশে উচ্চমাত্রায় শক্তি ও ফোকাস বজায় রাখে। তবে, কিছু গবেষক সন্ধ্যাবেলায় ব্যায়াম করার পক্ষেও সায় দিয়েছেন। তারা জানান, সন্ধ্যায় শরীরের টোনিং এবং পুনরুদ্ধারের জন্য ভালো সময় হতে পারে।
পরিসংখ্যান এবং গবেষণার ফলাফল:
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে ব্যায়াম করেন তাদের ৭৫% শতাংশের মধ্যে শারীরিক ফিটনেসের উন্নতি হয়েছে, তবে যারা সন্ধ্যাবেলায় ব্যায়াম করেন, তাদের ৬৫% শারীরিক শক্তির উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সকালের ব্যায়াম শরীরের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দেয়।
কীভাবে নির্বাচন করবেন?
সকালে এবং সন্ধ্যায় ব্যায়াম করার মধ্যে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রয়োজন এবং সময়ের চাহিদা। যারা খুব ভোরে উঠতে পারেন এবং সকালের সূর্যোদয় উপভোগ করেন, তাদের জন্য সকালে ব্যায়াম একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে, যারা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক কার্যকলাপে অভ্যস্ত, তারা সন্ধ্যার সময়টিকে আরও উপযুক্ত মনে করতে পারেন।
অবশেষে, এটি বলা যায় যে, সকালের এবং সন্ধ্যার ব্যায়ামের নিজস্ব সুবিধা রয়েছে। কেউ একটিকেই বেছে নেবেন বা নিজেদের জীবনযাপনের প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক সময়েও ব্যায়াম করতে পারেন। শরীরের সুস্থতার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন করুন যা আপনাকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয় এবং আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি দীর্ঘমেয়াদী ভালো প্রভাব ফেলতে পারে।