আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৩/০২/২০২৫ ০২:২৩পি এম
সুগার কমাতে কোন খাবারগুলো বেশি কার্যকর?
আজকের যুগে সুগারের সমস্যা এক বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসের প্রবণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে, সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। সুগার উচ্চ থাকলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার জন্ম নেয়, যেমন হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, চোখের সমস্যা ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত সুগার কমানোর জন্য কিছু খাবার আমাদের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু কি ধরনের খাবার আমাদের সাহায্য করতে পারে সুগার কমাতে? আজকের এই প্রবন্ধে আমরা সেই সব খাবারগুলোর উপর আলোচনা করবো যেগুলো সুগার কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর।
সুগার কি এবং কেন এটা কমানো প্রয়োজন?
সুগার (বা গ্লুকোজ) হলো একটি শক্তির উৎস যা আমাদের শরীরের কোষে পৌঁছায় এবং বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সাহায্য করে। তবে, যখন রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তে শর্করার স্তর, বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অতএব, সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক।
খাবারের ভূমিকা সুগার নিয়ন্ত্রণে
যদিও ওষুধ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে সুগার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে খাবারের মাধ্যমেও সুগারের পরিমাণ কমানো সম্ভব। বিশেষ কিছু খাবার আমাদের শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়ক। ডায়েট প্যাটার্ন, বিশেষ করে যেগুলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কম, এগুলো সুগার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সুগার কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী খাবার
১. বাদাম এবং মুগডাল
প্রতি দিনের ডায়েটে বাদাম এবং মুগডাল অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। বাদামে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করে, যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। মুগডালও সুগার কমানোর জন্য একটি জনপ্রিয় খাবার, যা খাওয়ার পর তীব্র গ্লুকোজ বৃদ্ধির পরিবর্তে ধীরে ধীরে শর্করা মুক্তি দেয়।
২. শাক-সবজি এবং সালাদ
সবুজ শাকসবজি, যেমন পালংশাক, কাঁচা শশা, টমেটো, লেটুস ইত্যাদি সুগার কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ফাইবার শরীরের গ্লুকোজ শোষণ ধীর করে দেয় এবং এটির দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে।
৩. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে পাওয়া যায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট, যা সুগারের পরিমাণ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, এতে থাকা ফাইবার এবং পটাসিয়াম শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করে, ফলে রক্তে সুগারের স্তর কমে আসে।
৪. দারুচিনি
দারুচিনি একটি মশলা যা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে সুগারের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন এক চামচ দারুচিনি রক্তে গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৫. গ্রীক দই
গ্রীক দই একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং শরীরে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত প্রোবায়োটিক এবং প্রোটিন শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক।
৬. ওটমিল
ওটমিলেও উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা শরীরের গ্লুকোজ শোষণ ধীর করে দেয়। এটি হালকা ও সহজপাচ্য খাবার, যা দিনের শুরুতে খাওয়া অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর হতে পারে। এছাড়াও, এটি দীর্ঘ সময় ধরে তৃপ্তি অনুভূতি দেয়, যা অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রতিরোধ করে।
৭. লেবু
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে সহায়ক। এটি শরীরের ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সহায়ক।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রভাব
সুগারের মাত্রা কমাতে সঠিক খাবারের পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধুমাত্র খাবার পরিবর্তন করে সুগারের পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব, তবে এটা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে পালন করতে হবে।
গবেষণায় পাওয়া ফলাফল
সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ধরনের খাবার, যেমন বাদাম, শাকসবজি, এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন তিনটি বাদাম খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে এনেছে। অন্য একটি গবেষণায়, গ্রীক দই খাওয়ার পর শরীরে ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে।
সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরের আলোচনা অনুযায়ী, কিছু খাবার যেমন বাদাম, মুগডাল, শাকসবজি, অ্যাভোকাডো, দারুচিনি, গ্রীক দই, ওটমিল এবং লেবু রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে শুধুমাত্র খাবার পরিবর্তন করলেই হবে না, জীবনযাত্রা এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডও এর একটি বড় অংশ। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে আমরা সুগারের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর ঝুঁকি কমাতে পারি।