আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ০৫/০২/২০২৫ ১২:৪৭পি এম
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এই রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং অনেকে প্রাণও হারান। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।
ডেঙ্গুর ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
ডেঙ্গু প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ১৭৭৯ সালে, এবং ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করে। বাংলাদেশে ২০০০ সালের পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০১৯ এবং ২০২৩ সালে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন।
ডেঙ্গুর লক্ষণ ও জটিলতা
ডেঙ্গু সাধারণত চারটি ভাইরাস স্ট্রেইনের (DEN-1, DEN-2, DEN-3, DEN-4) মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
উচ্চমাত্রার জ্বর
তীব্র মাথাব্যথা
চোখের পেছনে ব্যথা
শরীরব্যথা ও গাঁটে ব্যথা
বমি ভাব ও বমি
ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি
কিছু ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক রূপ নিতে পারে, যা ‘ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার’ বা ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ নামে পরিচিত। এতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, রক্তচাপের মাত্রাতিরিক্ত পতন এবং অঙ্গ বিকল হতে পারে।
কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়?
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নিচে ডেঙ্গু প্রতিরোধের কিছু কার্যকরী উপায় আলোচনা করা হলো:
১. মশার জন্মস্থল ধ্বংস করা
এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। তাই নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি:
বাড়ির চারপাশে যেকোনো স্থানে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন।
ফুলের টব, পুরনো টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র ও ড্রাম নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
এসির নিচের পানি জমে থাকলে সেটি ফেলে দিন।
রাস্তায় জমে থাকা পানির নিষ্কাশন নিশ্চিত করুন।
২. মশার কামড় থেকে বাঁচার উপায়
দিনে এবং রাতে মশারি ব্যবহার করুন।
লম্বা হাত-পা ঢাকা পোশাক পরার অভ্যাস করুন।
মশা নিরোধক লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
জানালা ও দরজায় মশার জাল লাগান।
৩. সামাজিক উদ্যোগ
স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে মশা নিধনের কর্মসূচি গ্রহণ করা।
গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালানো।
এলাকায় কীটনাশক ছিটানোর কার্যক্রম জোরদার করা।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও গবেষণার তথ্য
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগই সবচেয়ে কার্যকর। ডা. সাবিনা ইয়াসমিন, ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (IEDCR)-এর একজন গবেষক, বলেন, “যদি আমরা সকলে নিজ নিজ ঘরবাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখি, তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।”
ডেঙ্গুর ভবিষ্যৎ ও প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা
ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে স্থায়ী সমাধান পেতে হলে বিজ্ঞানীদের মতে, কার্যকরী টিকা ও জিনগতভাবে পরিবর্তিত মশার ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। বর্তমানে কিছু দেশ ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগ করছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও কার্যকর হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সতর্কতা ও সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। মশার বংশবিস্তার রোধ করা, মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে আমরা ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে আনতে পারি। সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই কেবল এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব।