আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৭/০১/২০২৫ ১২:১৪পি এম
ভাঙচুরের ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনর্গঠনের পথে জাতীয় সংসদ ভবন: প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকার বাজেট!
ঢাকা: গণআন্দোলনের প্রভাবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঘটে যাওয়া সহিংসতার জেরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া জাতীয় সংসদ ভবন এখন পুনর্গঠনের অপেক্ষায়। ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণে সংসদ ভবনের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। পুরো ভবন পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করতে আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে।
সংসদ ভবনের বর্তমান চিত্র
ভবনের টেলিফোন ও আইটি নেটওয়ার্ক পুরোপুরি পুনর্নির্মাণ করতে হবে। অধিবেশন কক্ষসহ পুরো ভবনের সাউন্ড সিস্টেম নতুন করে স্থাপন করতে হবে। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃসংস্কার ও দরজা-জানালাসহ দপ্তরগুলোর মেরামতের জন্যও বিপুল খরচ ধরা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সুষ্ঠুভাবে কাজ শুরু করতে সরকার থেকে বাজেট বরাদ্দ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ভাঙচুরের ভয়াবহতা
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সংসদ ভবনে প্রবেশ করে। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কক্ষগুলো ভাঙচুর করা হয়। সরকারি দপ্তরের চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র এমনকি এসি ও কম্পিউটার লুট করা হয়। বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার থেকে শুরু করে বাথরুমের বালতি পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়।
এই ধ্বংসযজ্ঞে সংসদ সচিবালয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার দুই দিন পর মন্ত্রী হোস্টেলে জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে সাময়িকভাবে কার্যক্রম চালু করা হয়।
সংস্কারের খরচ বিশ্লেষণ
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পুরো ভবনের সংস্কারে ৩০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাতগুলো হলো:
ভবনের অভ্যন্তরীণ মেরামত ও বৈদ্যুতিক কাজ:
টেলিফোন নেটওয়ার্ক ও সাউন্ড সিস্টেম পুনঃস্থাপন: ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এমপি হোস্টেলের বৈদ্যুতিক সংস্কার: ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কক্ষের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পুনঃস্থাপন: ৯০ লাখ টাকা।
আইটি খাতের উন্নয়ন:
পুরো ভবনের আইটি সিস্টেম পুনর্গঠনে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন।
দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র মেরামত:
১০ তলার বিভিন্ন অফিস, রিসেপশন, মসজিদ ও গণপূর্ত বিভাগের কাজ: ২১৯ কোটি টাকা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও স্ক্যানার স্থাপন: ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা।
সিকিউরিটি লাইট ও সার্ভিস লাইন মেরামত: ৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
পরবর্তী করণীয়
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংসদ সচিবালয় ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনের জন্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার পর গণপূর্ত অধিদপ্তর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, এই ভাঙচুর শুধু আর্থিক ক্ষতির নয়; এটি একটি জাতির গৌরবময় ভবনের সম্মানহানিও। তাই সংস্কারকাজে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।