আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৯/০১/২০২৫ ১২:২১পি এম
যুক্তরাষ্ট্রে তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার, একজনকে ফেরত পাঠানো
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এবার স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষার্থীরাও নজরদারিতে পড়েছেন। ইতোমধ্যেই স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করে নিয়মিত কাজ করছিলেন।
এদিকে, পিএইচডি করতে আসা আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় তার ভিসা বাতিল করা হয় এবং ফিরতি ফ্লাইটে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এবং আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ২৭ জানুয়ারি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত শর্ত ভঙ্গ করায় তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দেখতে পায়, তারা নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অন্য কোথাও দীর্ঘ সময় অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা নিয়মিত কাজ করছিলেন, যা তাদের স্টুডেন্ট ভিসার শর্তের পরিপন্থী।
ভিসা বাতিল ও ফেরত পাঠানোর ঘটনা
পিএইচডি করতে আসা আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জেএফকে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস অফিসারদের প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি কোথায় থাকবেন, কিভাবে খরচ চালাবেন, এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে না পারায় তার ভিসা বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
কোথায় কী ঘটছে?
নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান ও আরিজোনার মতো বেশ কয়েকটি রাজ্য থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেট, ট্রাভেল এজেন্সি বা চিকিৎসকের চেম্বারে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস করে বাকি সময় কাজ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বর্তমানে অবৈধ অভিবাসী ও স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহারকারীদের ধরতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করছে। ফলে এ ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত স্টুডেন্টদের গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানোর ঘটনা বাড়ছে।
কেন এত কড়াকড়ি?
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং অনুমোদিত কাজের বাইরে কোনো পেশায় যুক্ত হতে পারবেন না। কিন্তু কিছু শিক্ষার্থী এই নিয়ম ভঙ্গ করে ফুল-টাইম চাকরি করছেন, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ফলে কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সতর্কবার্তা
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। আইনজীবী মঈন চৌধুরী পরামর্শ দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচিত নিয়ম মেনে চলা এবং অবৈধভাবে কাজ না করা। তা না হলে তাদের গ্রেপ্তার, ভিসা বাতিল এবং দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ইমিগ্রেশন নীতি কঠোর হওয়ায় স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য আগত শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে আরও সচেতন থাকা প্রয়োজন।