আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ২৩/০১/২০২৫ ১২:৩৭পি এম
গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি ব্যর্থ হতে পারে: নেতানিয়াহু ও হামাসের মধ্যে বিরোধ
গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাসের নেতাদের মধ্যে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি অনীহা চুক্তিটির সফল বাস্তবায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। বিশেষত, উভয় পক্ষই দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী নয়, যার ফলে এই যুদ্ধবিরতি অল্প সময়ের মধ্যে ভেঙে যেতে পারে।
নেতানিয়াহুর অনিচ্ছা: যুদ্ধবিরতির প্রতি অটল অনীহা
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির শর্ত মানতে ইচ্ছুক নন। তিনি বহুবার উল্লেখ করেছেন, যুদ্ধবিরতি কেবলমাত্র সাময়িক একটি পদক্ষেপ, যা যেকোনো সময় ভেঙে দেওয়া হতে পারে যদি পরিস্থিতি পাল্টায়। নেতানিয়াহু এর আগে এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ পুনরায় শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং বর্তমানে তার এমন মনোভাব চুক্তির স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
হামাসের বিরোধিতা: যুদ্ধবিরতি স্থায়ী না করার ইচ্ছা
হামাসও যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী করতে আগ্রহী নয়। ১৯ জানুয়ারি, বন্দি বিনিময়ের সময় হামাস তাদের শক্তি প্রদর্শন করে এবং অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার লক্ষ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করে। তারা একদিকে যেমন গাজার অভ্যন্তরীণ শক্তি বজায় রাখতে চায়, তেমনি যুদ্ধের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। হামাসের নেতারা নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করার জন্য যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিতে প্রস্তুত হতে পারেন।
চুক্তির পরবর্তী পর্যায়ের বিলম্ব: বিপদ সংকেত
যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী পর্যায়ে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দি বিনিময়ের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই আলোচনা বিলম্বিত হওয়ায় চুক্তির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। নেতানিয়াহু এর আগেও এমন আলোচনাগুলি বিলম্বিত করেছেন, যা ভবিষ্যতে চুক্তির ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ চুক্তি বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পশ্চিম তীরে সহিংসতার বৃদ্ধি: নতুন অশান্তি শুরু হওয়ার আশঙ্কা
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি কট্টরপন্থি বসতির লোকজন সহিংসতা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা গাজা শান্তি চুক্তির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। নেতানিয়াহু এসব সহিংসতাকে উসকে দিতে পারেন, যা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের কারণ হতে পারে এবং পরিস্থিতি আবারও অবনতির দিকে যেতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা: চাপ কমার সম্ভাবনা
মধ্যপ্রাচ্যের আগের সংকটগুলোর সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টরা দুপক্ষকে শান্তি চুক্তি মেনে চলতে সক্রিয় ভূমিকা নিতেন। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন ভূমিকা পালনের বিষয়ে অনেকটাই সংশয় রয়েছে। যদি ট্রাম্প সক্রিয় ভূমিকা না নেন, তাহলে নেতানিয়াহু এবং হামাসের মধ্যে চুক্তির প্রতি যে অনীহা রয়েছে, তা আরও বাড়তে পারে এবং যুদ্ধ ফের শুরু হতে পারে।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত: শান্তির পথে হাঁটার আশা
গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখনও অনিশ্চিত। সর্বোপরি, নেতানিয়াহু এবং হামাসের মধ্যে অবিশ্বাস এবং দুর্বল অবস্থান এ চুক্তির স্থায়িত্বে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি উভয়পক্ষ শান্তির পথে হাঁটে, তবেই কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি টিকে থাকতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা