বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম:
Verified আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রকাশ ১৯/১২/২০২৪ ০৯:৩৩পি এম

শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মাদক সংশ্লিষ্টতা: একটি গভীর সংকট

শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মাদক সংশ্লিষ্টতা: একটি গভীর সংকট
দেশের শোবিজ অঙ্গন বর্তমানে এক ভয়ংকর অভিযোগের মুখোমুখি। নারকোটিক্স কন্ট্রোল বোর্ডের (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) সাম্প্রতিক এক তদন্তে উঠে এসেছে যে, শোবিজের জনপ্রিয় কয়েকজন তারকা মাদকের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে আছেন তানজিন তিশা, মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, সাফা কবির এবং সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েক।

এই অভিযোগ সামনে আসার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপের গ্রেপ্তারের পর তার ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ে এই তারকাদের মাদক কেনা-বেচার তথ্য পাওয়া গেছে। দীপের গ্রেপ্তার এবং তার কাছ থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় মাদক ব্যবসার এই চক্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

মাদকের ভয়াবহ বাস্তবতা
মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহার আমাদের সমাজে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে শুধু সাধারণ জনগণ নয়, বরং সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরাও জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, দীপের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, সাংকেতিক অক্ষরে মাদকের অর্ডার দেওয়া হতো। যেমন, এমডিএমএকে বলা হয় ‘ই’, এলএসডি’কে বলা হয় ‘এসিড’, এবং তরল গাঁজা পরিচিত ‘টিএসসি’ নামে। এসব মাদক নিয়মিত অর্ডার করেছেন উল্লেখিত তারকারা।

তারকাদের সামাজিক দায়িত্ব ও প্রত্যাশা
জনপ্রিয় তারকারা কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু যখন এই তারকারা মাদক ব্যবহার ও কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তখন সমাজে এর প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক হয়। তরুণ প্রজন্ম, যারা এসব তারকাকে তাদের আইকন মনে করে, তারা বিভ্রান্ত হয় এবং এর মাধ্যমে তারা ভুল বার্তা পায়।

আইন প্রয়োগ ও ন্যায়বিচার
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দীপের মোবাইল থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সংশ্লিষ্টদের কললিস্ট বিশ্লেষণ করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এখানেই প্রশ্ন উঠে আসে, তারকাদের নাম প্রকাশ করে তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার এই প্রবণতা কি ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

গণমাধ্যমের ভূমিকা
গণমাধ্যমের ওপর দায়িত্ব বর্তায় এমন সংবেদনশীল বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করা। তদন্ত চলাকালীন অপরাধীদের নাম প্রকাশ করা একটি বিতর্কিত বিষয়। এটি কেবল তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে না, বরং সামাজিক স্তরে ব্যক্তি বিশেষের সম্মানহানি ঘটায়।

সমাধানের পথ
১. মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কঠোর তৎপরতা ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।
২. শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
৩. মাদকবিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে তারকাদেরই নেতৃত্বে থাকা উচিত।
৪. তরুণ প্রজন্মের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরার জন্য প্রচারাভিযান চালানো জরুরি।


শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আমাদের সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত। এটি কেবল বিনোদন জগত নয়, বরং সামগ্রিকভাবে আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপর বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে। এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রশাসন, সমাজ এবং বিনোদন অঙ্গনের সকলেরই সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শোবিজ তারকাদের উচিত তাদের জনপ্রিয়তা ও প্রভাবকে সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানো এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত সংবাদ