বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের নাক গলানো কতটা যৌক্তিক?
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়ে মন্তব্য করে আসছে। প্রায়ই তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংখ্যালঘু বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। অন্যদিকে, ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের খবর বারবার আন্তর্জাতিক সংবাদে উঠে আসে। এতে প্রশ্ন ওঠে—নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলে, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের নাক গলানো কতটা যৌক্তিক?
ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কূটনৈতিক স্তরে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। এটি কখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ইস্যু, কখনো মন্দির ভাঙা কিংবা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। অথচ ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রায়শই গণপিটুনি, ধর্মান্তর চাপ, কিংবা শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে দেখা যায়। মুসলিমদের এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ভারতের এহেন আচরণ দ্বৈত নীতির উদাহরণ।
এই প্রবণতা কয়েক দশক ধরেই চলে আসছে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং এর পর থেকে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিষয়ে কথিত ‘অভিভাবকত্বের’ ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ভেতরে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর এলেই ভারত এ নিয়ে কড়া বক্তব্য দিতে থাকে। তবে এর বিপরীতে, ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়লেও বিষয়টি প্রায়শই অগ্রাহ্য করা হয়।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই কূটনৈতিক টানাপোড়েন মূলত দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে। তবে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি দুদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আলোচনার কেন্দ্রে।
ভারতের এহেন নাক গলানোর পেছনে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।
১. রাজনৈতিক: সংখ্যালঘু ইস্যু সামনে এনে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলে চাপের মুখে ফেলতে চায়।
২. কূটনৈতিক: নিজেদের ‘বড় ভাই’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. অভ্যন্তরীণ মনোভাব: নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে যে সমস্যা, তা ঢাকতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুকে সামনে আনে।
ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে একতরফা বিবৃতি দেয়, যা প্রায়শই বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের নিয়ে তাদের মন্তব্য, ঢাকার রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এদিকে, ভারত নিজ দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এড়াতে কৌশলগত নীরবতা পালন করে।
ভারতের দ্বৈতনীতি
ভারতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের সময় এই সমস্যা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মুসলিমদের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, ধর্মীয় স্থাপনা, এমনকি নাম নিয়েও আক্রমণ চালানো হয়। একদিকে মুসলিমদের উপর এই চাপ অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অভিভাবকত্বের ভূমিকা, দ্বিমুখী নীতির উদাহরণ।
ভারতের উচিত আগে নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তাদের পরিস্থিতি উন্নত করা। তারপরই অন্য দেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে নাক গলানোর নৈতিক অধিকার অর্জিত হবে। বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার এ ধরনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মেনে নিতে নারাজ, এবং এটি আঞ্চলিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন, লেখক ও সাংবাদিক